ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে রাষ্ট্রপতির আহ্বান

চীনে আরও বাংলাদেশী পণ্য প্রবেশের সুযোগ চাই

প্রকাশিত: ০৪:৪৯, ৯ নভেম্বর ২০১৪

চীনে আরও বাংলাদেশী পণ্য প্রবেশের সুযোগ চাই

বিডিনিউজ ॥ বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। পাশাপাশি বিদ্যমান বাণিজ্য ঘাটতি দূর করতে বাংলাদেশী পণ্যের প্রবেশাধিকার বাড়ানোরও অনুরোধ করেছেন তিনি। শনিবার সকালে বেজিংয়ের গ্রেট হলে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় রাষ্ট্রপতি এ আহ্বান জানান। বৈঠক প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতির প্রেসসচিব ইহসানুল করিম বলেন, রাষ্ট্রপতি বলেছেন, বাণিজ্য ঘাটতি দূর করতে চীন সরকার এরই মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। পাট ও পাটজাত পণ্যসহ বাংলাদেশী পণ্যের চীনে প্রবেশের ক্ষেত্রে আরও সুবিধা আমরা আশা করছি। চীনকে বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ-চীনের এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, পারস্পরিক আস্থা, একে অপরের সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা এই বন্ধুত্বের ভিত্তি। বৈঠকে সমুদ্রবিজ্ঞান ও নির্মাণ শিল্পে চীনের সঙ্গে একযোগে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন আবদুল হামিদ।সাক্ষাতে রাষ্ট্রপতি চীনের প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। ইহসানুল করিম বলেন, বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, বাংলাদেশ চীনের বহুদিনের বন্ধু, চায়নাও বাংলাদেশের বিশ্বস্ত বন্ধু। এই বন্ধুত্বের ভিত্তি হচ্ছে বিশ্বস্ততা এবং সহযোগিতা। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশের অগ্রগতির জন্য অভিনন্দন জানিয়ে শি জিনপিং বলেন, চীন বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতের উন্নয়নে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। এশিয়ান ইনফ্রাস্টাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকে (আইইবি) বাংলাদেশ যোগ দেয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট সন্তোষ প্রকাশ করেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিভিন্ন ফোরামে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন তিনি। আগামী বছর বাংলাদেশ থেকে ১০০ তরুণকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানানো হবে বলেও জানান শি জিনপিং। পরে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট লি ইউয়ানশাওয়ের আমন্ত্রণে মধ্যাহ্নভোজনে যোগ দেন। রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব শেখ আলতাফ আলী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (দ্বি-পাক্ষিক) মোস্তফা কামালসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিসিআইএমইসি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ॥ রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেছেন, এ অঞ্চলের লাখ লাখ দরিদ্র এবং প্রান্তিক ও জাতিগত গোষ্ঠীর মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য সুযোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ, চীন, ভারত, মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডর (বিসিআইএম-ইসি) খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রপতি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমরা বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমারকে একসঙ্গে কাজ করতে দেখেছি। রাষ্ট্রপতি শনিবার এখানে এ্যাপেক সিইও শীর্ষ সম্মেলনের অংশ হিসেবে কানেকটিভিটি পার্টনারশিপ শক্তিশালীকরণ সম্পর্কিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে ভাষণ প্রদানকালে একথা বলেন। বেজিংয়ের ফাং হুয়া হলে এই আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগতিক দেশ চীনসহ পাকিস্তান, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, মঙ্গোলিয়া, লাওসের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানগণ এবং জাতিসংঘ এসকাপ প্রধান অংশ নেন। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, চীনের জন্য বিসিআইএমইসি প্রাচীন দক্ষিণাঞ্চলীয় সিল্ক রোড পুনরায় চালু করার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে এবং অন্যান্য দেশের জন্য বিসিআইএমইসি সংযোগ অর্থনৈতিক অগ্রগতির সুযোগ সৃষ্টি হবে, টেকসই উন্নয়নের দ্বার উন্মোচিত হবে এবং জীবনমান উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। অপরদিকে সরাসরি ভৌগোলিক ও কমিউনিটি যোগাযোগ স্থাপন হবে। এতে এই অঞ্চলের লাখ লাখ দরিদ্র, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও জাতিগত জনগোষ্ঠীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির সুযোগ সৃষ্টি হবে। রাষ্ট্রপতি বলেন, বিসিআইএমর মধ্যে সাবরিজিওনাল অর্থনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে এ অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির ক্ষেত্রে এটি হবে একটি উদ্যোগ। রাষ্ট্রপতি বলেন, স্বল্প উন্নত দেশগুলোর জন্য সমর্থন প্রয়োজন। তিনি বলেন, দিন শেষে সকল প্রতিষ্ঠানকে পরিকল্পনা নিতে হবে এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আস্থার, পারস্পরিক সুবিধা ও পারস্পরিক সুবিধার সমবণ্টনের নীতি গ্রহণ করতে হবে। রাষ্ট্রপতি বলেন, চীনের প্রবৃদ্ধি অর্জন করা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। তিনি বলেন, আমরা সব সময় আঞ্চলিকতায় বিশ্বাসী। আমরা আমাদের নিজস্ব বন্দরে সংযোগে এবং আমাদের সাবরিজিওনে প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধিতে আগ্রহী। রাষ্ট্রপতি বলেন, আমরা মনে করি, সকল ক্ষেত্রে আমাদের সংযোগ প্রয়োজন। আমরা ধারণা, জ্ঞান, সংস্কৃতি, সড়ক, রেল ও বিমানের মাধ্যমে পরিবহন, প্রযুক্তি, জনগণের চলাচল, পণ্য সেবা ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যোগাযোগ বাড়াতে চাই।
×