ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জহুরুল হক ঘাঁটিকে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর আগেই সর্বাধুনিক বিমান বাহিনী

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ৯ নভেম্বর ২০১৪

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর আগেই সর্বাধুনিক বিমান বাহিনী

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের আগেই বিমানবাহিনীকে আরও আধুনিকায়নের মাধ্যমে শক্তিশালী ও কার্যকর বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। মুক্তিযুদ্ধে বিমানবাহিনীর সদস্যদের সাহসিকতাপূর্ণ অবদান জাতি চিরদিন স্মরণ করবে। শনিবার চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বিমানবাহিনীর জহুরুল হক ঘাঁটিকে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ফোর্সেস গোল-২০৩০-এর আলোকে বিমানবাহিনীকে একটি যুগোপযোগী চৌকস বাহিনীতে পরিণত করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার কাজ করছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিমানবাহিনীর রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধে এ বাহিনীর সদস্যরা যুদ্ধের প্রয়োজনীয় উপকরণ ছাড়াই শুধুমাত্র একটি হেলিকপ্টার, একটি ডিসি-৩ এবং একটি অটার বিমান নিয়ে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনা করেছিল। বিমানবাহিনীর দুঃসাহসিক বৈমানিকরা প্রথম বাংলার আকাশ সীমানায় প্রবেশ করে শত্রুর উপর সফলভাবে আঘাত হানতে সক্ষম হয়। মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে বিমানবাহিনী একটি মাত্র হেলিকপ্টার ও অটার বিমান দিয়ে ৪০টিরও বেশি সফল আক্রমণ পরিচালনা করেছিল, যা ছিল আমাদের বৈমানিকদের দক্ষতার নজির। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বিমানবাহিনীর কর্মকর্তারা সেক্টর কমান্ডারের মতো দািয়ত্ব পালন করেছেন। তাঁদের এ সাহসিকতাপূর্ণ অবদান জাতি চিরদিন স্মরণ করবে। উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম শহর এলাকা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর জহুরুল হক ঘাঁটি থেকে দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলসহ সমুদ্রসীমার সার্বিক নিরাপত্তার প্রয়োজনে স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ ঘাঁটির কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে বিমানবাহিনীর জহুরুল হক ঘাঁটির প্যারেড গ্রাউন্ডে এ উপলক্ষে আকর্ষণীয় কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। গ্রুপ ক্যাপ্টেন সাইদুর রহমান কুচকাওয়াজ পরিচালনা করেন। সকালে প্রধানমন্ত্রী প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছালে বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ এনামুল বারী ও ঘাঁটির কমান্ডিং অফিসার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজ ও সালাম পরিদর্শন করেন। কুচকাওয়াজ চলাকালে প্রধানমন্ত্রীকে ন্যাশনাল স্যালুট প্রদান করা হয়। এ সময় তিনবার চিয়ারআপ প্রতিধ্বনিত হয়। পাশাপাশি জাতীয় পতাকাবাহী হেলিকপ্টারের পাস্ট পরিচালিত হয়। বাসস জানায়, অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ এর আলোকে বিমানবাহিনীকে একটি যুগোপযোগী ও চৌকস বাহিনীতে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। শেখ হাসিনা বলেন, আমার বিশ্বাস আধুনিকীকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী দেশ ও জাতির উন্নয়ন কর্মকা-ে আরও সক্রিয় অবদান রাখতে সক্ষম হবে। দেশকে বহির্শত্রুর হাত থেকে রক্ষার জন্য সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ জন্য সেনা ও নৌবাহিনীর উন্নয়নকে আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি। গত মেয়াদে সেনা ও নৌবাহিনীর আধুনিকায়নে আমরা ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন করেছি। শেখ হাসিনা বলেন, সরকার সীমিত সম্পদ দিয়ে দেশের প্রতিটি সেক্টরে সুষম উন্নয়ন বাস্তবায়ন করছে। তিনি আশা করেন, আমাদের দেশপ্রেমিক সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকাকে বিশ্বের বুকে সমুন্নত রাখবে। বাংলাদেশকে বিশ্বসভায় মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে তুলে ধরবে। যে কোন বাহিনীর সদস্যের জন্য পেশাগত দক্ষতা অর্জন আবশ্যকীয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দক্ষতা যেমন একদিকে আত্মবিশ্বাস বাড়ায় তেমনি সংগঠনের জন্য বয়ে আনে সুনাম ও মর্যাদা। তিনি দক্ষ ও আদর্শ বিমানসেনা হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে বিমানবাহিনীর সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এ জন্য প্রয়োজন উন্নত প্রশিক্ষণ ও কঠোর পরিশ্রম। পাশাপাশি আপনাদের স্মরণে রাখতে হবে, স্বাধীনতার জন্য লাখো প্রাণের ত্যাগ ও তিতিক্ষার ইতিহাস। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই সরকার গঠন করেছে জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর উন্নয়নে অবদান রেখেছে। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আমরা বিমানবাহিনীতে চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান মিগ-২৯ সংযোজন করি। এছাড়া বিমানবাহিনীতে সুপরিসর সি-১৩০ পরিবহন বিমান এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আকাশ প্রতিরক্ষা রাডার স্থাপন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯-২০১৩ মেয়াদে সরকার বিমানবাহিনীর উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করেছে। তিনি বলেন, চীন থেকে ১৬টি যুদ্ধবিমান এবং রাশিয়া থেকে ৩টি গর-১৭১ হেলিকপ্টার বিমানবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, সরকার কক্সবাজারে একটি বিমানঘাঁটি স্থাপন করেছে। বিমানবাহিনীর জন্য এই ঘাঁটিতেই প্রথমবারের মতো ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র পদ্ধতি সংযোজন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমানবাহিনী ঘাঁটি বঙ্গবন্ধুতে ‘বঙ্গবন্ধু এ্যারোনটিক্যাল সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। উদ্ধার ও নিরাপত্তা পরিচালনার জন্য দুটি অত্যাধুনিক মেরিটাইম সার্চ এ্যান্ড রেসকিউ হেলিকপ্টার অড-১৩৯ শীঘ্রই বিমানবাহিনীতে সংযোজন করা হবে যা এই ঘাঁটি থেকে পরিচালিত হবে। তিনি বলেন, সরকার বিমানবাহিনীর শিক্ষানবিস বৈমানিক ও অন্যান্য শিক্ষানবিস অফিসারদের গবেষণা ও উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য বিমানবাহিনী একাডেমি, যশোরে ‘বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স’ স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। এর অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ চলছে। শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বিমানবাহিনীর সদস্যসংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। বিমানবাহিনীতে নতুন নতুন ইউনিট স্থাপনের ফলে জনবল বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বলেন, এতে পদোন্নতির পথ সুগম হচ্ছে। বিমানবাহিনীর সদস্যদের মনোবল ও কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি পাচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, বৈমানিকদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা কার্যকরভাবে দেশের কাজে লাগানোর জন্য তাঁদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া পদবির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বিমান সেনাদের চাকরির মেয়াদও পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ও এর সকল সদস্যের সুন্দর ভবিষ্যত ও অব্যাহত সাফল্য কামনা করে প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
×