ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শেখ হাসিনাকে হত্যার চক্রান্তকারী জেএমবির নারী জঙ্গী ভারতে আটক

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ৯ নভেম্বর ২০১৪

শেখ হাসিনাকে হত্যার চক্রান্তকারী জেএমবির নারী জঙ্গী ভারতে আটক

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্রকারী সন্দেহে ভারতের অসম রাজ্যের গুয়াহাটি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে জেএমবির এক নারী জঙ্গীকে। তার নাম সুজেনা বেগম ওরফে সুরজ ভানু (৩০)। তার স্বামীর নাম শাহনুর আলম ডাক্তার। অসমের গুয়াহাটি জেলার বরপেটা জেলার চতলা গ্রামে তার বাড়ি। নারীজঙ্গী সুজেনাকে গ্রেফতার করার সময় তার কোলে ছিল দেড় বছরের এক সন্তান। গুয়াহাটিতে ধৃত সুজেনার স্বামী শাহনুর আলম ডাক্তারকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫ লাখ টাকা পুরষ্কার ঘোষণা করা হয়েছে। ধৃত সুজেনা বর্ধমানের খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণের ঘটনাস্থলের অনতিদূরে শিমুলিয়া মাদ্রাসায় প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। অপরদিকে বর্ধমান খাগড়াগড়ের বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িত জেএমবির জিহাদীদের প্রশিক্ষক জিয়াউল হককে গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ। তাকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ বর্ধমান খাগড়াগড়ের বোমা বিস্ফোরণে নিহত জেএমবির জঙ্গী শাকিল আহমেদ ও তার স্ত্রী রাজিয়া বিবির মোবাইল ফোনের কললিস্ট পরীক্ষা করে জিয়াউলের হদিস পায়। বিস্ফোরণে জখম হয়ে শাকিল আহমেদ মারা যাওয়ার আগেও জিয়াউলের সঙ্গে কথা বলেছিলেন বলে জবানবন্দীতে জানিয়েছে নিহতের স্ত্রী রাজিয়া বিবি। অপরদিকে অসমে গ্রেফতারকৃত নারীজঙ্গী সুজেনা নিজে প্রশিক্ষিত জঙ্গী তো বটেই, সেই সঙ্গে তিনি বরপেটা থেকে পশ্চিমবঙ্গে এসে মঙ্গলকোর্টের শিমুলিয়া ও লালগোলার মুকিমনগরের মহিলা মাদ্রাসায়ও মহিলা জঙ্গীদের প্রশিক্ষণ দিতেন। খাগড়াগড়ের ঘটনায় ফেরার সাজিদের স্ত্রী ফাতেমা বিবি ও আরেক ফেরার ইউসুফ শেখের স্ত্রী আয়েশা বিবিও সুজেনার মতোই প্রশিক্ষণ দিতেন নারী জঙ্গীদের। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে আত্মঘাতী তামিল মহিলা যেভাবে মানববোমা ব্যবহার করে হত্যা করেছিল, ঠিক একই কায়দায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার ছক তৈরি করেছিল বাংলাদেশের জঙ্গী সংগঠন জেএমবি। এ জন্য মানববোমার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল বর্ধমানের খাগড়াগড়ের বোমা বিস্ফোরণের সময়ে গ্রেফতার হওয়া নিহত দুই জেএমবি সদস্যের স্ত্রী রাজিয়া বিবি, আলিমা বিবি ও আমিনা, আয়েশাকে। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএর প্রতিবেদনে এ ধরনের তথ্যের কথা উল্লেখ করেছে। বাংলাদেশীদের সঙ্গে বৈঠক শাহনুরের ॥ জুলাই মাসে ঈদের আগের দিন বাংলাদেশ থেকে আসা এক ধর্মীয় নেতা, সশস্র কয়েকজন যুবকের সঙ্গে বৈঠক করছিল শাহনুর আলম ওরফে ডাক্তার। ওই দিন শাহনুরের ছবি তুলতে দামী গাড়ি নিয়ে গ্রামে এসেছিল বোরকাপরা এক মহিলা; এমনই জানিয়েছেন বরপেটা চতলা গ্রামের বাসিন্দারা। তদন্ত সংস্থা এনআইএর বরাতে এ খবর দিয়ে কলকাতার বহুল প্রচারিত দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, অসম পুলিশের তালিকাভুক্ত জেএমবি জঙ্গী শাহনুরের খবর দিলে ৫ লাখ টাকার ‘ইনাম’ ঘোষণা করেছে তদন্ত সংস্থা এনআইএ। তদন্ত সংস্থার সূত্রের খবর হেদায়েতউল্লাহ নামে এক বাংলাদেশী মৌলভীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল শাহনুরের। সে সর্থেবাড়ি ও নলবাড়ির বিভিন্ন এলাকায় কয়েকটি সভাও করেছে। শাহনুর ও তার ভাই জাকারিয়ার সঙ্গে দেখা করতে আসে ৬০-৭০ জনের একদল সশস্র যুবক। শাহনুরের ভাই জাকারিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেখানে হাজির ছিল বাংলাদেশ থেকে আসা হেদায়েতউল্লাহও। বর্ধমান মাদ্রাসায় থাকাকালীন চেনিমারির বাসিন্দা সুসেনা ওরফে সুজেনা বেগমের যোগাযোগ হয় শাহনুরের। পরে দুইজনার বিয়ে হয়। সুজেনার মাধ্যমেই পশ্চিমবঙ্গে ঘাঁটি গেড়ে থাকা জিহাদীদের সঙ্গে পরিচয় হয় শাহনুরের। তদন্ত সংস্থা এনআইএ শাহনুরের খবর দিলে ৫ লাখ টাকা ইনাম ঘোষণা দিলেও তাদের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় তার নাম নেই। একটি গাড়ি চুরির ঘটনাতেও নাম জড়িয়েছে শাহনুরের। তখন পুলিশ তাকে গ্রেফতারের জন্য হানা দেয়। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। অসমের কামাখ্যা মন্দির ও অসম সচিবালয়ে জিহাদীরা হামলার ছক কষছেÑবললেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। এ কারণে সব এলাকার নিরাপত্তা আগের চেয়ে কঠোর করা হচ্ছে।
×