ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাণিজ্যিক বিদ্যুত কেন্দ্রের ধারণা ব্যর্থ হয়েছে

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ৮ নভেম্বর ২০১৪

বাণিজ্যিক বিদ্যুত কেন্দ্রের ধারণা ব্যর্থ হয়েছে

রশিদ মামুন ॥ বহুল প্রত্যাশার বাণিজ্যিক বিদ্যুত কেন্দ্রের ধারণা ব্যর্থ হয়েছে। এখনও পর্যন্ত এই ধারণায় কোন বিদ্যুত কেন্দ্রের চুক্তি হয়নি। ফলে পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী বছরের মধ্যে এখান থেকে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত ক্রয় সম্ভব হচ্ছে না। সরকারের নীতি-নির্ধারকরা বলছেন, তাঁরা এই ‘ধারণা’ ব্যবসায়ীদের বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এছাড়া দেশে বিদ্যুতের বাজার তদারকি করার মতো কোন প্রতিষ্ঠান গড়ে না ওঠা এবং বিশাল বিনিয়োগের নিশ্চয়তা না থাকায় বাণিজ্যিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। পার্শ¦বর্তী দেশ ভারতে বাণিজ্যিক বিদ্যুত কেন্দ্র রয়েছে। সরকার একটি নির্দিষ্ট হারে এখান থেকে বিদ্যুত ক্রয় করে। বাকি বিদ্যুত এসব কোম্পানি বেসরকারী উদ্যোক্তাদের কাছে বিক্রি করে। একই ধারণা থেকে দেশেও এই পরিকিল্পনা করা হয়েছিল। এর থেকে ৩০ ভাগ হারে বিদ্যুত কিনতে চেয়েছিল সরকার। এখন বাংলাদেশ ভারত থেকে যে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত ক্রয় করছে তার মধ্যে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত ওই দেশের বাণিজ্যিক বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে কেনা হচ্ছে। নতুন করে ভারত থেকে বাংলাদেশ যে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেনার প্রস্তাব দিয়েছে তাও ওই দেশের বাণিজ্যিক বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে ক্রয় করা হবে। কিন্তু দেশে এই ‘ধারণা’র বাণিজ্যিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান ছাড়া এগিয়ে আসেনি। পাওয়ার সেলের সাবেক মহপরিচালক মাহবুব সারওয়ার-ই-কায়নাত এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, প্রথমত এই বিদ্যুত বিক্রির নিশ্চয়তা দেখে দাতা সংস্থা বা ব্যাংক বিনিয়োগে আগ্রহী হয়নি। দ্বিতীয়ত তারা ৩০ ভাগ বিদ্যুত সরকারের কাছে বিক্রি করবে বাকি বিদ্যুত কে ক্রয় করবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়তে হয়। আমরা ভারতের মতো মার্কেট অপারেটর তৈরির সুপারিশ করেছিলাম। এই কাজটি পাওয়ারগ্রিড কোম্পানি করতে পারত কিন্তু তা করা হয়নি। তবে বিএসআরএম চট্টগ্রামে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করতে পারলে অনেকে আগ্রহী হবে বলে মনে করেন তিনি। সরকারের পরিকল্পনায় দেখা যায় ২০১৫ সালের মধ্যে সব মিলিয়ে বাণ্যিজ্যিক বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে সরকার তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত কিনবে। নীতিমালা অনুযায়ী একটি বিদ্যুত কেন্দ্রর মোট উৎপাদনের ৩০ শতাংশ কিনবে সরকার। অর্থাৎ বাণিজ্যিক বিদ্যুত কেন্দ্র ২০১৫ সালের মধ্যে বিদ্যুত উৎপাদন হবে ১২ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু এ ধরনের বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে কোন বিদ্যুত পাওয়ার আশাই এখন আর নেই। একমাত্র বিদ্যুত কেন্দ্র করার জন্য বিএসআরএমের চিটাগাং পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (সিপিসিএল) ও নানা জটিলতায় আটকে গেছে। পাওয়ার সেল সূত্র জানায়, বেসরকারী উদ্যোক্তরা উৎপাদিত বিদ্যুতের ক্রেতা পাচ্ছে না বলে সরকারকে জানিয়েছে। তারা চাইছে সরকার বেশি করে বিদ্যুত কিনুন। কিন্তু তা সম্ভব নয়। কারণ মার্চেন্ট পাওয়ার প্ল্যান্ট ও আইপিপির (ইন্ডেপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্ল্যান্ট) মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। সরকার আইপিপির পুরো বিদ্যুত কিনতে সরকার বাধ্য কিন্তু বাণিজ্যিক বিদ্যুত কেন্দ্রের ধারণা পৃথক। তাই সরকারের পক্ষে বাণিজ্যিক কেন্দ্র থেকে পুরো বিদ্যুত কেনা সম্ভব নয়। জানা যায়, বেসরকারী পর্যায়ে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ উন্মুক্ত করার পর ১৩টি কোম্পানি মার্চেন্ট পাওয়ার প্ল্যান্ট বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে। পরে আটটি কোম্পানি তাদের প্রস্তাব ফিরিয়ে নেয়। উৎপাদিত বিদ্যুতের সিংহভাগের ক্রেতার নিশ্চয়তা না পাওয়ার উদ্যোগক্তারা বাণিজ্যিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। বিদ্যুত বিভাগ গঠিত নেগোসিয়েশন কমিটি বাকি পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের আগ্রহপত্র মূল্যায়ন করে একটি সুপারিশপত্র তৈরি করে। মাত্র দুটি কোম্পানির প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য বলে নেগোসিয়েশন কমিটি সুপারিশ করে। উল্লেখ্য, দেশের বিদ্যুত ঘাটতি মেটাতে সরকার ২০১১ সালে ৩১ মে ২০০৮ সালের একটি নীতিমালার আলোকে বাণিজ্যিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ উন্মুক্ত করে দেয়। এ জাতীয় বিদ্যুত কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের বিইআরসি থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। এছাড়া পাওয়ার সেলের নিবন্ধিত হতে হবে। নিবন্ধনে প্রতি মেগাওয়াটের জন্য পাওয়ার সেলকে নির্ধারিত হারে ফি দিতে হবে। ওই সময় বলা হয়েছিল বিদ্যুত বিভাগ কর্তৃক গঠিত একটি স্বাধীন রেগুলেটরি বোর্ড এসব বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে বিদ্যুত কেনা-বেচা তদারকি করবে। নির্মাতা কোম্পানি বিইিআরসি কর্তৃক নির্ধারিত দামে বিদ্যুত বিক্রি করবে। কোম্পানিগুলো নির্ধারিত হারে হুইলিং চার্জ দিয়ে সরকারী সঞ্চালন লাইন ব্যবহার করতে পারবে। বাণিজ্যিক বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে সরকার সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ বিদ্যুত কিনবে। বিদ্যুত কোম্পানিগুলোকে প্রতি বছরের জন্য লাইসেন্স নবায়ন করতে হবে।
×