ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

হেমন্ত সন্ধ্যায় বর্ণিল আয়োজনে আলী যাকেরের জন্মদিন পালন

প্রকাশিত: ০৫:১২, ৭ নভেম্বর ২০১৪

হেমন্ত সন্ধ্যায় বর্ণিল আয়োজনে আলী যাকেরের জন্মদিন পালন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ডাকনাম ছোটু। পুরো নাম আলী যাকের। মঞ্চ ও টিভি নাটকের অনন্য এক অভিনেতা। বিচিত্র চরিত্রকে ধারণ করে পাড়ি দিয়েছেন নাট্যভুবনের দীর্ঘ পথ। সহজাতভাবেই জাত অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন নিজেকে। টেলিভিশন ও মঞ্চের পাশাপাশি চলচ্চিত্রেও রেখেছেন সু-অভিনেতার স্বাক্ষর। সব মিলিয়ে তাই দর্শকের কাছে দারুণভাবে সমাদৃত বরেণ্য এই অভিনয়শিল্পী। বৃহস্পতিবার হেমন্ত সন্ধ্যায় বর্ণিল আয়োজনে পালিত হলো তাঁর ৭০তম জন্মদিন। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা প্লাজায় চমৎকার এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়। আলীয় যাকেরের জন্মদিন উদ্্যাপনকে ঘিরে পুরো চিত্রশালা প্লাজা যেন রূপ নেয় উৎসব আঙিনায়। সংস্কৃতি অঙ্গনের নানা ভুবনের ব্যক্তিত্বদের আগমনে মুখরিত হয়ে ওঠে আলোর পথযাত্রী শীর্ষক এ অনুষ্ঠানস্থল। তাঁকে কেন্দ্র করে বসেছিল বরেণ্য ব্যক্তিত্বদের জমজমাট আড্ডা। শিল্পীকে জানানো হয় হৃদয়ের ভালবাসায় আবৃত ফুলেল শুভেচ্ছা। ছিল সঙ্গীতের সুরধ্বনি ও নৃত্যের ছন্দোময় জন্মদিনের আনন্দবার্তা। বিশিষ্টজনদের স্মৃতিচারণায় উঠে আসে আলী যাকেরের অভিনয়জীবনের বর্ণাঢ্য গল্প। আর এসবের সঙ্গে বাড়তি আকর্ষণ যোগ করে এই শিল্পীর তোলা ছবি নিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও তাঁকে নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী। আর আলী যাকেরের বক্তব্যে উঠে আসে তাঁর নাট্যভাবনা। আয়োজনের সূচনা হয় ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’ গানটির মেলবন্ধনে গড়া কোরিওগ্রাফির মাধ্যমে। গানের সুরে সুরে একঝাঁক শিল্পীর নৃত্য । আর সেই নৃত্যরত শিল্পীদের ভেতর দিয়ে মঞ্চে আসেন আলী যাকের। উপর থেকে ঝরনাধারার মতো বর্ষিত হয় লাল গোলাপের পাপড়ি। এরপর শুরু হয় জন্মদিনের শুভেচ্ছা নিবেদন পর্ব। নাট্যজন ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বিনিময় পর্বে বরেণ্য এই নাট্যজনকে ফুলেল ভালবাসা, করমর্দন ও অভিনন্দনে সিক্ত করেন নাটকসহ সংস্কৃতির নানা ভুবনের সহযাত্রীরা। নবীন-প্রবীণ ও মধ্যবয়সী নানা স্তরের মানুষের রাশি রাশি শুভেচ্ছায় স্নাত হন বিশিষ্ট এই অভিনয়শিল্পী। ব্যক্তির বাইরে সাংগঠনিকভাবেও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয় শুভেচ্ছা। ৭০তম জন্মদিনের শুভলগ্নে নাটকের এই সারথীকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে শুভেচ্ছা জানান সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও সচিব ড. রণজিৎ কুমার বিশ্বাস, ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইন্সটিটিউটের (আইটিআই) পক্ষে রামেন্দু মজুমদার, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের পক্ষে সভাপতি গোলাম ক্দ্দুুছ ও সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের পক্ষে আকতারুজ্জামান ও ঝুনা চৌধুরী, শিল্পকলা একাডেমির পক্ষে লিয়াকত আলী লাকী, আয়োজক নাট্য সংগঠনের পক্ষে আতাউর রহমান, খেলাঘর আসরের পক্ষে আব্দুল মতিন ভূঁইয়া, কণ্ঠশীলনের পক্ষে মীর বরকত, সুবচনের পক্ষে আহমেদ গিয়াস, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর পক্ষে মানজার চৌধুরী সুইট। এছাড়া সাংগঠনিকভাবে ফুলেল শুভেচ্ছা জানায় আরণ্যক নাট্যদল, লোক নাট্যদল, পদাতিক নাট্য সংসদ, চারুনীড়ম থিয়েটার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ, নৃত্যাঞ্চল, নাট্যধারাসহ কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠন। ব্যক্তিগতভাবে ফুলেল ভালবাসা নিবেদন করেন ফেরদৌসী মজুমদার, আলী যাকেরের সহধর্মিণী সারা যাকের, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী তিমির নন্দী, নাট্য নির্দেশক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসির উদ্দিন ইউসুফ, অভিনয়শিল্পী আবুল হায়াত, কেরামত মওলা, সাংবাদিক আবেদ খান, সঙ্গীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, মিতা হক, আফসানা মিমি, বিপাশা হায়াতসহ সংস্কৃতি অঙ্গনের সুধীজন, ভক্ত ও অনুরাগীরা। আয়োজক নাট্য সংগঠনের সভাপতি আতাউর রহমান শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় দীর্ঘদিনের। সৃজন ও মননের বিচারে তাঁকে বলা যায় মানবরতœ কিংবা দেশরতœ। যখন যে কাজটি করেছেন সেখানেই সফল হয়েছেন। বক্তŸ্য শেষে আলী যাকেরকে নিবেদিত মানপত্র পাঠ করেন আতাউর রহমান। মানপত্র পাঠ শেষে আলী যাকেরকে নিবেদিত সঙ্গীত পরিবেশন করেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। গান শেষে শুরু হয় আড্ডা। আলী যাকেরের বর্ণাঢ্য নাট্যজীবনের নানা বিষয়ে আলোকপাত করেন রামেন্দু মজুমদার, আবুল হায়াত, নাসির উদ্দিন ইউসুফ, লাকী ইনাম ও লিয়াকত আলী লাকী। জন্মজয়ন্তীর এই বর্ণাঢ্য আয়োজনে বিভিন্ন সময়ে আলী যাকেরের তোলা আলোকচিত্র প্রদর্শনের পাশাপাশি প্রদর্শিত হয় আলী যাকেরের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র। কাজী ইমদাদুল হকের জন্মবার্ষিকী কথাসাহিত্যিক কাজী ইমদাদুল হকের ১৩১তম জন্মবার্ষিকী পালন উপলক্ষে বাংলা একাডেমি বৃহস্পতিবার একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে একক বক্তৃতানুষ্ঠানের আয়োজন করে। কাজী ইমদাদুল হকের শিক্ষাভাবনা ও সৃষ্টিকর্ম শীর্ষক বক্তৃতা প্রদান করেন অধ্যাপক আহমদ কবির। শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন কাজী ইমদাদুল হকের পরিবারের সদস্য নুসরাত সুলতানা। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। একক বক্তৃতায় অধ্যাপক আহমদ কবির বলেন, কাজী ইমদাদুল হক তাঁর বিখ্যাত আবদুল্লাহ উপন্যাসের জন্যই অধিক আলোচিত যদিও তাঁর সুগভীর শিক্ষাভাবনা আমাদের শিক্ষা গবেষণায় যোগ করতে পারে নতুন মাত্রা। শিক্ষাচিন্তায় তিনি ছিলেন প্রগতিশীল ও প্রায়োগিকতাবাদী। বুদ্ধির মুক্তির প্রভায় দীপান্বিত মননে তিনি বাঙালী মুসলমানের সার্বিক মুক্তির জন্য সুশিক্ষাকে প্রধান গুরুত্ব প্রদান করেছেন। তিনি বলেন, একজন শিক্ষাসংগঠক হিসেবে শিক্ষক পত্রিকা সম্পাদনা, ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল বিকাশে সক্রিয়তা, নারীশিক্ষা ও মাতৃভাষা বাংলায় শিক্ষার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান কাজী ইমদাদুল হককে আমাদের সাহিত্যভুবনের পাশাপাশি শিক্ষাজগতের একজন মহৎ পথিকৃতের আসন প্রদান করেছে। শুভেচ্ছা বক্তব্যে নুসরাত সুলতানা কাজী ইমদাদুল হককে স্মরণ করার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে বাংলা একাডেমিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। সভাপতির বক্তব্যে শামসুজ্জামান খান বলেন, কাজী ইমদাদুল হক ছিলেন প্রকৃতই একজন রেনেসাঁমানব। কথাসাহিত্যের পাশাপাশি মৌলিক চিন্তামূলক রচনায় তাঁর বুদ্ধিবৃত্তিকতার পরিচয় নিহিত। তিনি বলেন, বাঙালী মুসলমান সমাজের আলোকায়নে কাজী ইমদাদুল হকের মতো লেখকদের অবদান চিরকাল স্মরণযোগ্য।
×