ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন পেশ

লো ভোল্টেজের কারণে বিদ্যুত বিপর্যয় ঘটে থাকতে পারে

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ৭ নভেম্বর ২০১৪

লো ভোল্টেজের কারণে বিদ্যুত বিপর্যয় ঘটে থাকতে পারে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঠিক কী কারণে দেশজুড়ে বিদ্যুত বিপর্যয় হয়েছিল, তা অনুদ্ঘাটিত রেখেই প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে সরকার গঠিত তদন্ত কমিটি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর বিদ্যুত বিভাগ এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে দেশের মধ্যে লো ভোল্টেজের কারণে বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তবে এর উৎপত্তি স্থল অথবা কিভাবে লো ভোল্টেজের সূচনা হলো, তা জানাতে পারেনি তদন্ত কমিটি। তাঁরা আশা করছেন চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরই বিদ্যুত বিপর্যয়ের মূল রহস্য জানা যাবে। এ জন্য কমিটি আরও ১০ কার্যদিবস সময় চেয়েছে সরকারের কাছে। যদিও তদন্ত কমিটি বলছে ভারত-বাংলাদেশ বিদ্যুত সঞ্চালন লাইনে ত্রুটির কারণে এই বিপর্যয় নয়। সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত কমিটির প্রধান বিদ্যুত বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ কায়কাওয়াস বলেন, আমাদের ধারণা দেয়া হয়েছিল পশ্চিমাঞ্চল গ্রিডের কারণে এ বিপর্যয় হয়েছে। এ জন্য আমরা আগে পশ্চিমাঞ্চল গ্রিডে ত্রুটি খুঁজতে গিয়েছিলাম। তিনি বলেন, আমরা ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টার (এনএলডিসি), ভারত-বাংলাদেশ বিদ্যুত সঞ্চালন ব্যবস্থা (হাইভোল্টেজ ব্যাক টু ব্যাক সাবস্টেশন), আশুগঞ্জ বিদ্যুত কেন্দ্র এবং হরিপুর বিদ্যুত কেন্দ্র দেখেছি। এ সব স্থানে কোন ত্রুটি খুঁজে পাওয়া যায়নি, যাতে এ ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে। তিনি বলেন, আমাদের দেশের বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো অনেক পুরাতন, সে সব কেন্দ্র থেকে আমাদের তথ্য পেতে দেরি হচ্ছে। এ কারণে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করতে সময় লাগছে। তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, আমাদের দেশের মধ্যে আগে (বিপর্যয়) ট্রিপ করেছে এরপর ভারতের দুটি লাইনের মধ্যে একটি ট্রিপ করেছে। ফলে ভারতের কারণে এ সমস্যা নয়, তা নিশ্চিত হয়ে গেছে বরং আমাদের বিপর্যয়ের কারণে ভারতে সমস্যা হয়েছে। বিদ্যুত বিপর্যয়ের প্রথম দিন থেকেই বলা হয় আন্ডার ফ্রিকোয়েন্সি বা লো ভোল্টেজের কারণে এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। তবে কোথায় এ সমস্যা, তা কেউ বলতে পারছেন না। রবিবার বলা হয়েছিল পশ্চিমাঞ্চল গ্রিডে কোন ত্রুটির কারণে এ বিপর্যয় হয়েছে। তদন্ত কমিটি তিন দিন তদন্তের পর এসেও লো ভোল্টেজের কথাই বলছে। তবে কোন স্থানে এর উৎপত্তি হয়েছে, তা বলতে পারছে না বা কেন লো ভোল্টেজের সৃষ্টি হলোÑতাও বলতে পারছে না কেউ। সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, আমরা ঘটনার গভীরে প্রবেশ করতে চাচ্ছি, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করা যায়। আমাদের সঞ্চালন ব্যবস্থায় কোন ত্রুটির কারণেই বিপর্যয় হয়েছেÑএ বিষয়ে আমরা নিশ্চিত। আমরা আমাদের সঞ্চালন ব্যবস্থার আধুনিকায়নের চিন্তা করছি। তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন স্থানের বিস্তারিত তথ্য যোগাড় করছি। এর মধ্যে বিদ্যুত কেন্দ্রের উৎপাদন, তখন ফ্রিকোয়েন্সিতে বিদ্যুত দেয়া হচ্ছিল ব্যাকআপ রিলে কাজ করছিল কিনাÑ এ সব তথ্য বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে মূল রহস্য জানা যাবে বলে জানান তিনি। গত শনিবার বিদ্যুত বিপর্যয়ে সারাদেশ অন্ধকারে তলিয়ে যায়। ওই দিন বেলা ১১টা ২৭ মিনিটে এবং বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে দুই দফা সঞ্চালন লাইনে বিপর্যয় (ট্রিপ করে) দেখা দেয়। এতে সরাদেশ বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম এবং সিলেট এলাকায় এবং রাতে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের বিদ্যুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। সরকার এবং পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি (পিজিসিবি) পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। বিদ্যুত বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ কায়কাওয়াসকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত কমিটি ভারত-বাংলাদেশ বিদ্যুত সঞ্চালন ব্যবস্থা (হাইভোল্টেজ ব্যাক টু ব্যাক সাবস্টেশন), পশ্চিমাঞ্চল গ্রিড, আশুগঞ্জ বিদ্যুত কেন্দ্র এবং নারায়ণগঞ্জের হরিপুর বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করে। প্রাথমিকভাবে বিপর্যয়ের জন্য দুটি বিষয়কে দায়ী করা হয়। পিজিসিবির পক্ষ থেকে বলা হয়, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ভারত-বাংলাদেশ সঞ্চালন লাইনে ত্রুটির কারণে এ বিপর্যয় ঘটেছে। এতে লো ভোল্টেজের কারণে সারাদেশে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়। রবিবার সকালে সরকারের তরফ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুত সচিব বলেন, পশ্চিমাঞ্চল সঞ্চালন লাইনে ত্রুটির কারণে এই বিপর্যয়। কিন্তু তদন্ত কমিটি এ সব জায়গা পরিদর্শন করে বিপর্যয় ঘটার মতো কিছু খুঁজে পায়নি।
×