ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাকিব ঘূর্ণিতে জয়ের আশা বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ৭ নভেম্বর ২০১৪

সাকিব ঘূর্ণিতে জয়ের আশা বাংলাদেশের

মিথুন আশরাফ খুলনা থেকে ॥ সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণিতে জিম্বাবুইয়ের প্রথম ইনিংসে চতুর্থদিনের শুরুতেই ধস নেমেছে। এবার পঞ্চম দিনেও সাকিব ঘূর্ণির আশায় সবাই। সেই ঘূর্ণির মায়ার জাদুতে যে আবারও জিম্বাবুইয়ে ব্যাটসম্যানরা কাবু হয়ে যেতে পারেন। আর তাতে বাংলাদেশের জয়ও এসে যেতে পারে। চতুর্থদিন শেষে যা মনে হচ্ছিল ম্যাচ ড্র’র দিকে ঝুঁকছে, এখন তা বাংলাদেশের জয়ের দিকেই ঝুঁকে গেছে। বাংলাদেশ যে এরই মধ্যে ২৬৬ রানে এগিয়ে গেছে। সঙ্গে উইকেটে যে স্পিনারদের প্রাধান্যও বেড়ে গেছে। এই এগিয়ে থাকা যদি ৩০০ রান অতিক্রম করে, আর যদি জিম্বাবুইয়ে ব্যাটিংয়ে নামে তখন বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনাই বেশি থাকছে। বাংলাদেশ দ্রুত খেললেও দিনের প্রথম সেশন চলে যাবে। দুই সেশনে ৩০০ রান তোলা সম্ভব নয়। জিম্বাবুইয়েকে ৩০০ বা তার বেশি রানের টার্গেট দিয়ে যে এখনও হারেনি বাংলাদেশ। টার্গেট অতিক্রম করতে গেলেই মাসাকাদজা (১৫৮) ও চাকবভার (১০১) শতকে যে প্রথম ইনিংসে ৩৬৮ রান করা জিম্বাবুইয়ের ইনিংসে আবারও ধস নামতে পারে তা ভাল করেই জানে ব্রেন্ডন টেইলরের দল। তাদের সামনে একটিই পথ খোলা থাকবে, যে করেই হোক ম্যাচ থেকে ড্র ফল বের করে নিতে হবে। আর যদি এই ভাবনাতেও খেলে আর বাংলাদেশ স্পিনাররা চতুর্থদিনের প্রথম সেশনে যেমন ৩৭ রানেই জিম্বাবুইয়ের ৫ উইকেট তুলে নিয়েছে, সেইরকম কিছু করে ফেলে তাহলে জিম্বাবুইয়ে বিপাকেই পড়ে যাবে। অর্থাৎ প্রথম ইনিংসে সাকিব (১৩৭) ও তামিমের (১০৯) শতকে যে বাংলাদেশ ৪৩৩ রান করেছে আর চতুর্থদিন শেষে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের অপরাজিত ৬৩ রানে ৫ উইকেটে ২০১ রান করেছে, সেখানেই এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। এখন খুলনা টেস্ট থেকে হয় ড্র নয়ত জয়ই পেতে পারে বাংলাদেশ। আর যদি কোন কারণে হার হয়, সেটি ‘অঘটন’ ছাড়া আর কিছুই হবে না। জিম্বাবুইয়ে বেশি ভাল খেললেই শুধু তা সম্ভব। সাকিব আল হাসান অনন্য সবসময়ই। এবারও অনন্য এক রেকর্ড গড়লেন। কোন টেস্টে শতক ও ৫ উইকেট নিলেন দুইবার। খুলনা টেস্টে চতুর্থদিনেই সেই সাফল্য সাকিবের হয়ে গেছে। এর আগে ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে একবার এমন নৈপুণ্য দেখিয়েছেন সাকিব। সাকিব যেদিন এমন কৃতিত্ব গড়লেন, সেদিন মুমিনুল হক বাংলাদেশের হয়ে মাত্র ১১ টেস্টে ২১ ইনিংস খেলে ১০০০ রান পূরণ করেছেন। তার ৫৪ রানের পর মাহমুদুল্লাহর অপরাজিত ৬৩ ও শুভগত হোমের অপরাজিত ২৩ রানই বাংলাদেশকে স্বপ্ন দেখাতে সহায়তা করছে। যে স্বপ্নে এখন পঞ্চম দিনে আর একটু এগিয়ে যেতে হবে। যদি বাংলাদেশ ইনিংস ঘোষণা না করে কিংবা অলআউট না হয়, খেলতেই থাকে তাহলে অবধারিতভাবেই টেস্টটি ড্র হয়ে যাবে। বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট ৩ উইকেটে জেতায় ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যাবে। আর যদি ঝুঁকি নিয়ে জিতে যায় তাহলে খুলনাতেই সিরিজ জয় হয়ে যাবে। এর আগে কখনই বাংলাদেশ ৩০০ রানের বেশি টার্গেট দিয়ে জিম্বাবুইয়ের কাছে হারেনি। গত বছর ৪০১ রানের টার্গেট দিয়ে জিতেছে। ২০০৫ সালেও ৩৮১ রানের টার্গেট দিয়ে জিতেছে। যখনই বাংলাদেশ জিম্বাবুইয়েকে বড় টার্গেট ছুড়ে দিতে পেরেছে জয় এসেছে। জিম্বাবুইয়েকে হারানো ৩ টেস্টের মধ্যে দুই টেস্টেই বাংলাদেশ ৩০০ রানের বেশি টার্গেট দিয়ে জিতেছে। এবারও সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে চলেছে মুশফিকবাহিনী। দেখা যাক, আজ তাতে সাফল্য মিলে কিনা। বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম বলেছিলেন, ‘আমরা খুলনাতেই সিরিজ জিততে চাই।’ সেই সম্ভাবনা এবার উঁকিও দিয়েছে। তৃতীয় দিনে যে টেস্ট থেকে ফল বের করা কঠিন হয়ে পড়বে ধারণা করা হচ্ছিল, চতুর্থদিনে এসে দেখা গেছে ফল হওয়া সম্ভব। আর সেটি বাংলাদেশের পক্ষেই যাচ্ছে। এখন সবকিছু নির্ভর করে বোলারদের উপর। বিশেষ করে স্পিনারদের উপর। জিম্বাবুইয়ের স্পিনার ওয়েলার যদি ৪ উইকেট তুলে নিতে খানিকটা বাংলাদেশ শিবিরে কম্পন ধরাতে পারেন, তাহলে সাকিব, তাইজুলরা উইকেটের সুবিধা পেয়ে কী করতে পারেন তা প্রথম টেস্টেও প্রমাণ মিলেছে। আর এই যে জয়ের সম্ভাবনা জেগেছে বলা হচ্ছে সেটিও তো চতুর্থদিনের শুরুতেই জিম্বাবুইয়ে ইনিংসে যে স্পিনাররা ধস নামিয়েছেন তার জন্যই। এখন দেখা যাক শেষপর্যন্ত পঞ্চমদিনে কি ঘটে। সিরিজের ফয়সালা হয়ে যায় নাকি চট্টগ্রামে তৃতীয় টেস্টের ফলের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।
×