ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রেপ্লিকায় বাংলার জীবন

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ৬ নভেম্বর ২০১৪

রেপ্লিকায় বাংলার জীবন

বাঙালীর রয়েছে হাজার বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। ঐতিহ্যকে ধারণ করেই বাঙালী বিশ্ব সভায় এগিয়ে যাচ্ছে। বাঙালীর এই এগিয়ে যাওয়া অতীতকাল থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রবহমান। বিশ্ব সংস্কৃতিতে বাঙালী তার আপন সত্তার পরিচয় দিয়ে চলেছে। আপন সত্তার পরিচয় দেয়ার এই মাত্রায় সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে নতুন এক অধ্যায়ের। এর ফলে দেশীয় সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য পৌঁছে যাবে বিশ্বের নানা প্রান্তে। শনিবার জনকণ্ঠে প্রকাশিত এক সংবাদে জানা যায়, বাঙালীর সংস্কৃতির আড়াই হাজার বছরের ঐতিহ্যের বিশাল ভা-ারের গভীরতা বিশ্বকে জানাতে দেশে এই প্রথম ইতিহাসের বিষয়বস্তু নিয়ে রেপ্লিকা (অনুকৃতি) তৈরি হচ্ছে বগুড়ায়। প্রাচীন পুন্ড্রবর্ধন মহাস্থানগড়ের কাছেই শেখেরকোলা পালপাড়া গ্রামের যে কুমোররা বগুড়ার দইয়ের সরা ও খুটি বানাত তাদেরই প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে এসব রেপ্লিকা। সংবাদে জানা যায়, প্রাচীন প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো থেকে টেরাকোটার ছবি তুলে কম্পিউটারের মাধ্যমে প্রিন্ট করে তা দেখে ডাইস (ছাঁচ) বানানোর পর জলাশয়ের নিচের আঠালো মাটি দিয়ে রেপ্লিকা তৈরি করা হয়। তৈরিকৃত এসব রেপ্লিকা দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে নতুন মাত্রায় চিহ্নিত করবে বহির্বিশ্বে। জানা যায়, বাংলার প্রাচীন সভ্যতার লীলাভূমিখ্যাত বগুড়ার মহাস্থানগড়, নওগাঁর সোমপুর বিহার বা পাহাড়পুর, বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ ও দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দিরের বিভিন্ন দুষ্প্রাপ্য ও মূল্যবান নিদর্শনের রেপ্লিকা তৈরি করা হচ্ছে। কেন এই রেপ্লিকা তৈরি করা হচ্ছে? ঐতিহ্য অন্বেষণ পোড়ামাটির ফলকচিত্রের (টেরাকোটা) অনুকৃতি বা রেপ্লিকা তৈরির কাজ তদারকি করছে। প্রকাশিত সংবাদে এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রতœতত্ত্ববিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজার রহমান সংবাদ মাধ্যমকে জানান, বিশ্বের বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শনে পর্যটকরা গেলে সেখানকার ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে অবহিত হন। সেই সঙ্গে নিজের পরিবারসহ স্থানীয় মানুষদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভ্রমণে আসা স্থানের স্মারক (স্যুভেনির) ও রেপ্লিকা নিয়ে যেতে পারে, এতে দুই অঞ্চলের মানুষের হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বিনিময় ঘটে। এই প্রক্রিয়া বিভিন্ন দেশে বহুকাল ধরে চলে আসছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য বাংলাদেশে এই প্রক্রিয়ার চল ছিল না। ফলে ভ্রমণে আসা পর্যটকরা বাংলাদেশের হাজার বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির বিশদ নমুনা সঙ্গে নিয়ে যেতে পারতেন না। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পর্যটকদের একটা দাবি ছিল সরকার যেন স্যুভেনির ও রেপ্লিকা তৈরি করে। জানা যায়, পর্যটকদের দাবি ও দেশীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে বিশ্বের বুকে তুলে ধরতে দেশের চারটি প্রতœতাত্ত্বিক স্থানকে বেছে নিয়ে সেখানকার বিভিন্ন দুষ্প্রাপ্য, মূল্যবান কারুকার্য ও উদ্ধারকৃত প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শনের রেপ্লিকা তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ঐতিহ্য অন্বেষণের এ উদ্যোগের সহায়তায় হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন। ইতিহাস প্রচার ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এ ধরনের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকে। তাঁরা মনে করছেন, স্যুভেনির ও রেপ্লিকা তৈরির মাধ্যমে হাজার হাজার বছরের বাংলার সমৃদ্ধ অতীত ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বের নানা প্রান্তে। এসব রেপ্লিকা গিফট বা উপহার সামগ্রী হিসেবে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। মৃৎশিল্পের এসব রেপ্লিকা স্থলপথ, রেলপথ, নৌপথ ও বিমানপথে দূর-দূরান্তে বহনের সুবিধার্থে সব ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শনের রেপ্লিকা তৈরির মাধ্যমে দেশের মৃতপ্রায় মৃৎশিল্প নতুন করে প্রাণ ফিরে পাবেÑ পাশাপাশি এতে কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে। বাংলার ঐতিহ্যম-িত নক্সাদার এসব রেপ্লিকা বাঙালী জীবনকে বিশ্বের বুকে তুলে ধরবে।
×