ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

তামিমের ধৈর্যের প্রশংসা!

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ৪ নভেম্বর ২০১৪

তামিমের ধৈর্যের প্রশংসা!

স্পোর্টস রিপোর্টার, খুলনা থেকে ॥ খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের বিপক্ষে জিম্বাবুইয়ের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনের খেলা যাঁরা দেখেছেন, তাঁদের সবার চোখেমুখে স্বাভাবিকভাবেই রাজ্যের বিস্ময়। সবার কণ্ঠে একই সুর, ‘তামিম এত স্লোও খেলেন!’ সত্যি বিস্ময়করই বটে। যে তামিম শট খেলায় অভ্যস্ত। তাঁর ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ে প্রতিপক্ষ বোলাররা নাস্তানাবুদ হয়ে যান, সেই তামিম কিনা ৫০ রান করতে বল খেলেছেন ১৬৯টি! দিন শেষে ৭৪ রান করেছেন ২৫০ বলে! টেস্ট ক্যারিয়ারে তামিম কখনই এত বেশি বল খেলে অর্ধশতক করেননি। জিম্বাবুইয়ে বোলাররাও নিশ্চয়ই তামিমের এমন রূপ দেখে বিস্মিত হয়েছেন। সারাদিন এ ব্যাটসম্যান ব্যাট করেছেন। খেলেছেন মোট ৩৬৫ মিনিট অর্থাৎ ৬ ঘণ্টা! এত বেশি সময় ধরেও তামিম কোনদিন ব্যাটিং করেননি। খুলনায় আসার পর থেকেই তামিমকে নিয়ে ব্যস্ত থেকেছেন বাংলাদেশ কোচ চন্দ্রিকা হাতুরাসিংহে। অনুশীলনে তামিমকে হাতে ধরিয়ে ব্যাটিং করিয়েছেন। দেখিয়ে দিয়েছেন কিভাবে কোন বলটি খেলা উচিত। এর সঙ্গে হাতের ব্যথা থেকেও তামিমকে মুক্ত করার চেষ্টায় ছিলেন হাতুরাসিংহে। দুটি ভাবনাতেই সফল হয়েছেন কোচ। তবে একটি জিনিস যে দেখা গেছে, তার প্রমাণও মিলেছে। নেটে ব্যাটিং অনুশীলনে কখনই হাতুরাসিংহে ছক্কা হাঁকানোর মতো শট নিতে দেননি তামিমকে। তাতে সাফল্য মিলল। একসঙ্গে দুই কাজ হয়ে গেল। প্রথম কাজ হয়েছে, হাতে খানিক ব্যথা থাকলেও তামিম জোরে শট না খেললে সমস্যা হবে না। তামিম খেলেনওনি। একটি ছক্কাও হাঁকাননি। দ্বিতীয় কাজ হয়েছে, তামিম রান পেয়েছেন। ধীরে ধীরে এগিয়ে যাওয়ার যে মন্ত্র তামিমকে শিখিয়ে দিয়েছেন হাতুরাসিংহে তাতে শতভাগ সাফল্য মিলেছে। এর সঙ্গে উইকেটের সহযোগিতা তো ছিলই। ব্যাটসম্যান ভুল না করলে খুলনার উইকেটে আউট হওয়া কঠিনই। তামিম ভুলও করেননি। মাঝে মধ্যে শট খেলার চেষ্টা করেন। কিন্তু তামিম নিজেই তাতে সফল হননি। ধীরে ধীরে নিজের ইনিংস সাজিয়েছেন। শুরু থেকেই রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে থাকেন তামিম। প্রয়োজনে পুরো ওভার খেলেও কোন রান নেন না। উইকেট আঁকড়ে থাকার এতটাই আকাক্ষা কাজ করেছে যে ২৫ বলে গিয়েও তামিমের স্কোরবোর্ডে রান জমা হয় মাত্র ২! স্কোরবোর্ডে ২০ রান যোগ করেন ৫৩ বলে। এভাবে চলতে থেকে একটা সময় ক্যারিয়ারের ১৭তম টেস্ট অর্ধশতক করেন তামিম। এ অর্ধশতকটি তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশি বল খেলে এমন অর্জন পাওয়া ইনিংস। তবে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে প্রথমবার অর্ধশতক করেছেন তামিম। এর আগেও ৩৬ টেস্টের প্রথম ইনিংসে এসে ৩৬.৯৭ গড়ে মোট ২৫১৪ রান করে ফেলা তামিম এমন মন্থরভাবে ব্যাট করেছেন। তবে এবারের মতো কোনবারই হয়নি। এর আগে ২০১১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৪১ বলে অর্ধশতক করেছিলেন এ ওপেনার। সেটি সোমবার পর্যন্ত তামিমের ধীরগতির অর্ধশতক করা স্লো ইনিংস ছিল। তবে তামিম আগেও পারেননি, এখনও রাজিন সালেহের সবচেয়ে বেশি বল খেলে অর্ধশতক করার রেকর্ডটি ভাঙতে পারেননি। ২০০৩ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০৪ বলে ও ২০০৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৭৫ বলে অর্ধশতক করেছিলেন রাজিন সালেহ। তা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি বলে অর্ধশতক করার রেকর্ড হয়ে আছে। তামিম যে ধীরগতির ইনিংস খেলেছেন এমন ইনিংসে দল অবশ্য ভালই উপকৃত হয়েছে। দিন শেষে দল ৩ উইকেটে ১৯৩ রান করতে পেরেছে। এর মধ্যে তামিমেরই রান অপরাজিত ৭৪ আর বল খেলেছেন ২৪৯টি। মাত্র ৬টি চার হাঁকিয়েছেন! দিনের প্রথম বলটিও খেলেছেন তামিম। শেষ বলটিও। শুরু থেকে শেষপর্যন্ত খেলে যান। তার সামনে দিয়ে শামসুর, মুমিনুল ও মাহমুদুল্লাহ আউট হন। কিন্তু তামিম উইকেটে আঁকড়ে থাকার চ্যালেঞ্জেই আঁকড়ে থাকেন। তাঁর এমন সিদ্ধান্তে দল এখন অনেক এগিয়েও রয়েছে। প্রথম দিন মাত্র ৩ উইকেট হারিয়েছে। আজ ধুমধারাক্কা খেলে দ্রুত স্কোরবোর্ডে রান ওঠাতে পারবে দল। তাতে জিম্বাবুইয়েও চাপে পড়বে আর ১৬টি রান তামিমের স্কোরবোর্ডে যুক্ত হলে ২০১০ সালের মে মাসের পর প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে যে টেস্টে শতক আসে না, সেই খরাও ঘুচে যাবে। তবে মানতেই হবে, তামিম সবাইকে বিস্মিতই করে দিয়েছেন এতটা স্লো খেলে।
×