ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পদ্মা সেতু ও নদীশাসন কাজ তদারকি করবে কোরীয় কোম্পানি

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ৪ নভেম্বর ২০১৪

পদ্মা সেতু ও নদীশাসন কাজ তদারকি করবে কোরীয় কোম্পানি

চুক্তি সই অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ মূল পদ্মা সেতু ও নদীশাসন কাজ তদারকির জন্য কোরিয়ান কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন পরামর্শক হিসেবে কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে কর্পোরেশনের কাজ শুরু করতে আর কোন প্রক্রিয়া সংক্রান্ত বাধা থাকছে না। ফলে মূল সেতু নির্মাণ ও নদীশাসন চলাকালীন ও নির্মাণ-পরবর্তী এক বছর তদারকির দায়িত্ব পালন করবে প্রতিষ্ঠানটি। এতে মোট ব্যয় হবে ৩৮৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা। সোমবার রাজধানীর বনানীর সেতু ভবনে এ সংক্রান্ত চুক্তিটি স্বাক্ষর করেন সরকারের পক্ষে পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম এবং দক্ষিণ কোরিয়ান কোম্পানির পক্ষে হো চি মিন। এ সময় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত ১৩ অক্টোবর সরকারী ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে কোরিয়ান এ কোম্পানিকে পরামর্শক নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। আগামী ২০১৭ সালের ডিসেম্বর বা ২০১৮ সালের প্রথম দিকে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে আশাপ্রকাশ করা হয়েছে। সূত্র জানায়, মূল সেতু ও নদীশাসন অংশের পরামর্শক নিয়োগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। এতে ১০টি প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে চারটি কারিগরিভাবে যোগ্য বিবেচিত হয়। সেগুলো হচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্রের লুইস বার্জার গ্রুপ ইনকর্পোরেশন, ফ্রান্সের ইগিস ইন্টারন্যাশনাল, দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে কর্পোরেশন ও ভারতের ইন্টারন্যাশনাল কন্সালট্যান্টস এ্যান্ড টেকনোক্রেটস প্রাইভেট লিমিটেড। গত জানুয়ারিতে এ কাজের জন্য চূড়ান্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়। কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাব মিলিয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পায় কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে। মূল সেতু নির্মাণ ও নদীশাসন চলাকালীন ও নির্মাণ-পরবর্তী এক বছর তদারকির দায়িত্ব পালন করবে প্রতিষ্ঠানটি। পরামর্শক নিয়োগ প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনের পরই চুক্তি স্বাক্ষর করা হলো। সূত্র জানায়, এই পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন করবে কি না সে বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্ত দিতে কালক্ষেপনের কারণে এবং পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন দ্রুত করতে ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থ সহায়তা না নেয়ার বিষয়ে বিশ্বব্যাংককে সাফ জানিয়ে দেয় সরকার। পদ্মা সেতু প্রকল্পে সংস্থাটির ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি পুনর্বিবেচনার প্রস্তাব প্রত্যাহার করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক ই-মেইল বার্তায় বিশ্বব্যাংকের উর্ধতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হয়। এটি জানানোর পরদিন সকালে বিশ্বব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য প্রকাশ করে এবং সন্ধ্যায় সরকারী এক বিবৃতিতে জানানো হয়, নির্বাচনী অঙ্গীকার পরিপূরণের জন্য সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে, বিশ্বব্যাংকের সহায়তা ছাড়াই এই প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে। প্রয়োজনে প্রকল্পের ব্যয় কমানোর জন্য শুধু সড়ক সংযোগ সেতু নির্মাণ করা হবে। একই সঙ্গে অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদেরও এই তথ্য সরবরাহ করে তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানানো হয়। তার আগে পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের বিষয়টি জানুয়ারির মধ্যে নিশ্চিত করার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল সরকার। পরবর্তীতে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে প্রক্রিয়া এগিয়ে যেতে থাকে। এরই মধ্যে মূল সেতুর কাজ ও নদীশাসনের কাজের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মূল সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হবে ১২ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে মোট ব্যয়ের ২৫ দশমিক ৬০ শতাংশ (৩ হাজার ১০৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা) দেশীয় অর্থে ও অবশিষ্ট ৭৪ দশমিক ৪০ শতাংশ (৯ হাজার ২৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা) বৈদেশিক মুদ্রায় (ডলারে) পরিশোধ করতে হবে। সেতু বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের ১১ মে পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণে প্রাথমিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। চূড়ান্ত মূল্যায়ন শেষে ২০১১ সালের মাঝামাঝি ঠিকাদার নিয়োগ দেয়ার কথা ছিল। সে সময় মূল সেতুর ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছিল ৯ হাজার ১২৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা। তবে বিশ্বব্যাংকের আপত্তিতে ২০১১ সালের আগস্টে প্রকল্পের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। নানা জটিলতায় প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর ২০১৩ সালের ২৬ জুন চূড়ান্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়। আর গত ২৪ এপ্রিল মূল সেতুর আর্থিক প্রস্তাব জমা পড়ে। অর্থাৎ তিন বছরের ব্যবধানে মূল সেতু নির্মাণে ব্যয় বাড়ছে ৩ হাজার ৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। তবে তিন বছরের ব্যবধানে ব্যয় বাড়লেও সর্বশেষ প্রাক্কলিত ব্যয়ের তুলনায় দরদাতা প্রতিষ্ঠান প্রায় ১২ দশমিক ৬২ শতাংশ কম দর দিয়েছে। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ হচ্ছে ১ হাজার ৭৫২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। গত বছর ২৬ জুন চূড়ান্ত দরপত্র আহ্বানের পর মূল সেতু নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয় ১৩ হাজার ৮৮৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি এ ব্যয় প্রাক্কলন করেছিল। সূত্র জানায়, মূল পদ্মা সেতু নির্মাণে ১০টি প্রতিষ্ঠান প্রাক-যোগ্যতা বাছাই দরপত্রে অংশ নেয়। সেখান থেকে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান প্রাথমিকভাবে যোগ্য বলে বিবেচিত হয়। পরে বিশ্বব্যাংক কালো তালিকাভুক্ত করায় চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানিকে বাতিল করা হয়। গত বছর ২৬ জুন চারটি প্রতিষ্ঠানের কাছে চূড়ান্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে তিনটি প্রতিষ্ঠান অংশ নিলে সবগুলোই কারিগরিভাবে যোগ্য বিবেচিত হয়। অপর দুই প্রতিষ্ঠান হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং সিএ্যান্ডটি কর্পোরেশন এবং ডেলিম-এলএ্যান্ডটি জেভি। কিন্তু আর্থিক প্রস্তাব জমাদানের ক্ষেত্রে ওই দুই প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে ১০ সপ্তাহ ও ১১ সপ্তাহ সময় বাড়ানোর দাবি জানায়। কিন্তু পদ্মা সেতু প্রকল্পের ক্রয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মনসেল-এইকম ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি (টিইসি) এতে সম্মত হয়নি। ফলে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে চায়না মেজর ব্রিজকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দেয়ার সুপারিশ করা হয়।
×