ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জব্বার পিস্তল দিয়ে আমার মামাত ভাই সখানাথকে গুলিতে হত্যা করে

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ৪ নভেম্বর ২০১৪

জব্বার পিস্তল দিয়ে আমার মামাত ভাই সখানাথকে গুলিতে হত্যা করে

যুদ্ধাপরাধী বিচার সাক্ষী বীরেন্দ্রনাথের জবানবন্দী স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত পিরোজপুরের জাতীয় পাটির সাবেক নেতা পলাতক ইজ্ঞিনিয়ার আব্দুল জব্বারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১৭ তম সাক্ষী বিরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে তিনি বলেছেন, জব্বার নিজ হাতে তার পিস্তল দিয়ে আমার মামাতো ভাই সখানাথ খরাতীকে গুলি করে হত্যা করে। এর পর তার নির্দেশে রাজাকার বাহিনী গুলি করে আমার পিতা সহ ১২জন কে হত্যা করে । জবানবন্দী শেষে আসামী পক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য বুধবার দিন ধার্য করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল -১ এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দু সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। ট্রাইব্যুণালে সাক্ষীকে সাক্ষ্য প্রদানে সহায়তা করেন প্রসি্িকউটর জাহিদ ইমাম। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন ,আমার নাম বিরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস । আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৬৬ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম- নলী , থানা- মঠবাড়িয়া ,জেলা -পিরোজপুর। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল ২৩ বছর। তখন আমি ডিগ্রী পাশ করে বেকার ছিলাম। বর্তমানে আমি গৃহস্থালী কাজ করি। আসামী জব্বার ইজ্ঞিনিয়ার পাকিস্তান আমলে কনভেনশন মুসলিম লীগের একজন নেতা ছিলেন। ৭ মার্চ ও ২৬ মার্চ ১৯৭১ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ ও স্বাধীনতা ঘোষনার পর আমরা এলাকার ১০০/১৫০ জন যুবক নলী হাই স্কুল মাঠে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের জন্য ট্রেনিং নেওয়া শুরু করি। নৌবাহিনীর কাঞ্চন মিয়া এবং গেরিলা হাবিবুর রহমান আমাদের ট্রেনিং দেয়া শুরু করেন। ঐ সময় পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর পক্ষ গ্রহণ করেন আসামী আব্দুল জব্বার। তার নির্দেশে মঠবাড়িয়া রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয়। সাক্ষী আরো বলেন , ২২শে মে সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে আব্দুল জব্বার স্থানীয় রাজাকর ইস্কান্দার মৃধা সহ স্থানীয় রাজাকাররা একত্রিত হয়ে বিভিন্ন ধরনের আগ্নেযাস্ত্র নিয়ে পশ্চিম দিকে থেকে আামাদের নলী গ্রামে আক্রমন করে। সে সময় আমরা গ্রামের যুবকরা তাদের প্রতিবেরাধ করোর চেষ্টা করি। ঐ সময় রাজাকার বাহিনী আসামী আব্দুল জব্বারের নির্দেশে এলোপাথারি আমাদের ওপর গুলি বর্ষন শুরু করে। সে সময় আতœ রক্ষার জন্য গ্রামের অনেক যুবক পাালিয়ে যায়। ঐ সময় আসামী আব্দূর জব্বার ইজ্ঞিনিয়ার তার হাতে থাকা পিস্তল দিয়ে আমার মামাতে ভাই সখানাথ খরাতীকে গুলি করে হত্যা করে। রাজাকার নুর হোসেন মিয়া তার হাতে থাকা রাইফেল দিয়ে গুলি করে আমার পিতা নিশি কান্ত বিশ্বাসকে হত্যা করে। ঐ সময় আসামী আব্দুল জব্বার ইজ্ঞিনিয়ারের নির্দেশে রাজাকার বাহিনীর লোকজন তাদের হাতে থাকা রাইফেল দিয়ে এলোপাথারি গুলি করলে সুরেন বিশ্বাস , জিতেন্দ্র নাথ বিশ্বাস , উপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস , গনেশ চন্দ্র বিশ্বাস , নেপাল চন্দ্র মিস্ত্রি ,বসন্ত হালদার , ষষ্ঠী হালদার সহ মোট ১১ জন ঘটনাস্থলেই মারা যায়। প্রসিকিউশনের সাক্ষী আরো বলেন , রাজাকারদের একজন আমাকে লক্ষ্য করে রাইফেল দিয়ে গুলি ছুড়লে তা আমার ডান পায়ে লাগে এবং আমি গুরুতর জখম হই। এর পরে জব্বারের নিদেৃশে রাজাকাররা আমাদের বাড়ি সহ গ্রামের ৬০ টি বাড়ি ঘর লুটপাট করে অগ্নিসংযোগ করে ।বেং বিকালের দিকে তারা আমাদের গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। উল্লেখ্য, গত ২০ জুলাই আদালতে জব্বারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর ঋষিকেশ সাহা। অপরদিকে বিরোধীতা করে শুনানি করেন তার পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োগ প্রাপ্ত আইনজীবী আবুল হাসান। গত ৮ জুলাই জব্বারের পক্ষে একজন রাষ্ট্রীয় আইনজীবী নিয়োগ দিয়ে অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল। এর আগে গত ২৯ এপ্রিল এ মামলার তদন্ত সম্পন্ন করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের কাছে দাখিল করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। পরে প্রতিবেদনের নথিপত্র, সাক্ষ্য-প্রমাণসহ যাবতীয় বিচার বিশ্লেষণ করে পাঁচটি অভিযোগে ৭৯ পৃষ্ঠার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। গত ১২ মে তার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনীত পাঁচটি অভিযোগ আমলে নিয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। তবে এখনো তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করতে পারেনি। এরপর গত ১৪ আগস্ট জব্বারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।জাতীয় পার্টির সাবেক এই নেতার বিরুদ্ধে ৩৬ জনকে হত্যা ২০০ জনকে ধর্মান্তরিত এবং লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে ৫৫৭টি বাড়ি-ঘর ধ্বংস করার অভিযোগ রয়েছে।
×