ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচন, কি হতে যাচ্ছে?

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ৪ নভেম্বর ২০১৪

যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচন, কি হতে যাচ্ছে?

শিতাংশু গুহ আজ মঙ্গলবার ৪ নবেম্বর ২০১৪ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচন। চার বছর পর পর জেনারেল ইলেকশনের ঠিক মধ্যখানে অর্থাৎ দুই বছরের মাথায় মিডটার্ম নির্বাচন হয় নবেম্বর মাসের প্রথম সোমবারের পর যে মঙ্গলবার সেইদিন। এ বছর তাই এটা ৪ নবেম্বর। ২০১৬-এর নবেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বা সাধারণ নির্বাচন। মধ্যবর্তী নির্বাচনকে তাই জাতীয় নির্বাচনের ‘পূর্বাভাস’ বলা হয়, অর্থাৎ ২০১৬-তে হোয়াইট হাউস কাদের দখলে যাবে এই নির্বাচনে এর আভাস মিলবে। তাই যদি হয় তাহলে ২০১৬-তে রিপাবলিকানরা আবার ৮ বছর পর হোয়াইট হাউস ফিরে পাবেন। কারণ এই নির্বাচনে তাঁরা জিতবেন। এমনিতে নিকটবর্তী সময়ে ডেমোক্র্যাটদের একটানা ১২ বছর হোয়াইট হাউসে থাকার কোন রেকর্ড নেই; রিপাবলিকানদের আছে। সুতরাং বিদায় ডেমোক্র্যাট, স্বাগতম রিপাবলিকান। ২০১৬-তে কে হতে পারেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট? সেই আলোচনা পরে। মিডটার্মে রিপাবলিকানদের রমরমা অবস্থা এবং ডেমোক্র্যাটদের অবস্থা ত্রাহি মধুসূদন। ২০১৪ মিডটার্ম ইলেকশন ডেমোক্র্যাটদের জন্য একটি ‘বাজে নির্বাচনী দিন’ হবে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থা কিছুটা চাঙ্গা হলেও বিদেশনীতিসহ সামগ্রিক অবস্থা ভাল নয়। ডেমোক্র্যাটদের অবস্থা আমাদের আওয়ামী লীগের মতো; খেলে ভাল, কিন্তু গোল দিতে পারে না। বাতাস এবার রিপাবলিকানদের অনুকূলে। ওবামার প্রতি মানুষের অসুন্তুষ্টি বা বড় বড় ইস্যুতে সরকার সক্ষমতা দেখাতে পারছে না বা মানুষ মনে করছে দেশ সঠিক পথে যাচ্ছে না। এ মুহূর্তে ওবামার জনপ্রিয়তা সর্বনিম্ন ৪০%-এ পৌঁছেছে। ১০ জনের মধ্যে ৬ জন ওয়াশিংটনের প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না। ইবোলা সংক্রমণ এবং ইসলামী স্টেট প্রশ্নে ৪ জনের মধ্যে ৩ জন ওবামা ও ডেমোক্র্যাটদের দায়ী করছেন। ওবামা কেয়ার (স্বাস্থ্যনীতি) তো আছেই। ওবামার আগের সেই ক্যারিশমা নেই, তাই এই নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের পরাজয়ের সম্ভাবনা ষোলআনা। কাকে ভোট দেবেন সিএনএন-ওয়াশিংটন পোস্টের এক জরিপে ৫০% বলেছেন রিপাবলিকানদের পক্ষে, ৪৪% ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে। যত দোষ নন্দঘোষ, ওবামার। তাই এবার ডেমোক্র্যাটদের মিডটার্ম কৌশল হচ্ছেÑ ‘রান এওয়ে ফ্রম ওবামা’ অর্থাৎ ওবামা থেকে দূরে থাক। ধারণা করা হচ্ছে, কংগ্রেসের ভারসাম্য যেমন আছে তেমনই থাকবে, অর্থাৎ রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। কিন্তু ফাইট হবে সিনেট নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। সিনেট এ সময়ে ডেমোক্র্যাটদের হাতে; কিন্তু সেটা রিপাবলিকানদের হাতে চলে যেতে পারে। এটি দখলে নিতে রিপাবলিকানদের আরও ৬টি আসন দরকার। এ মুহূর্তে তাঁরা ডেমোক্র্যাট অধিকৃত ৭টি সিট জিততে দারুণ ফাইট দিচ্ছেন। ওইসব স্টেট হচ্ছে আলাস্কা, আরকানসাস, কলোরাডো, আইওয়া, লুইজিয়ানা, নিউ হ্যাম্পশায়ার ও নর্থ ক্যারোলিনা। যদিও তাঁরা জর্জিয়া, ক্যানসাস ও কেন্টাকির আসন হারাতে পারেন। ৯টি স্টেট যেখানে সিনেট রেস তুঙ্গে সেখানে সিএনএন-ওয়াশিংটন পোস্টের এক জরিপে রিপাবলিকান-ডেমোক্র্যাট ভারসাম্য দেখানো হচ্ছে ৫৭-৫১%। এতে বলা হচ্ছে, ওবামার ডিজএপ্রুভাল রেট্ ৫১%। এ সপ্তাহে ওবামা বিভিন্ন স্টেটে ক্যাম্পেইনে ব্যস্ত, কিন্তু যেসব স্টেটে সিনেট রেস তুঙ্গে সেখানে তিনি যাচ্ছেন না, কারণ প্রার্থীরা তাঁকে চাচ্ছেন না। তাই তিনি যাচ্ছেন গবর্নরদের সাহায্যার্থে। এবার কিছুটা পরিসংখ্যান নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করা যাক। এ মুহূর্তে সিনেটে ৪৫ জন রিপাবলিকান সিনেটর আছেন, ৯৩% সম্ভাবনা রয়েছে তাঁরা আরও ৭টি আসন জিতে ৫২-তে উঠবেন এবং সিনেট তাঁদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। প্রতি স্টেট থেকে ২ জন করে সিনেটর নির্বাচিত হন এবং কংগ্রেসের আপার হাউস সিনেটে মোট ৫০ল্প২ =১০০টি আসন আছে। যে দল ৫১টি আসন পায়, সিনেট তাদের দখলে থাকে। মিডটার্মে এবার ৩৩টি মেয়াদোত্তীর্ণ আসনে নির্বাচন হচ্ছে। সঙ্গে রয়েছে ৩টি আসনে বিশেষ নির্বাচন। এবার যাঁরা জিতবেন তাঁরা ৩ জানুয়ারি ২০১৫ থেকে ৩ জানুয়ারি ২০২১ পর্যন্ত সিনেটর থাকবেন। ২০১৪ হচ্ছে সরাসরি নির্বাচনে সিনেটর নির্বাচনের ১০০ বছর। যে ৩৬টি সিনেট আসনে নির্বাচন হচ্ছে, তাতে ডেমোক্র্যাটদের ২১টি এবং রিপাবলিকানদের ১৫টি আসন রয়েছে। নিজেদের সবগুলো আসন ঠিক রেখে ৬টি ডেমোক্র্যাট আসন ছিনিয়ে নিতে পারলেই কেবল সিনেট রিপাবলিকানদের দখলে যাবে। এটা ১১৪তম কংগ্রেস নির্বাচন এবং এবার হাউসের (কংগ্রেস) ৪৩৫টি আসনেই নির্বাচন হচ্ছে। রিপাবলিকানদের হাতেই কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ থাকার সম্ভাবনা ৯৯%। এজন্য ২১৮টি আসন দরকার। বর্তমান কংগ্রেসে রিপাবলিকানদের রয়েছে ২৩৪টি সিট এবং ডেমোক্র্যাটদের ২০১টি। নির্বাচনী এক্সপার্টদের মতে এবার হাউসে রিপাবলিকানদের ৮টি আসন বেড়ে ২৪২ হবে এবং ডেমোক্র্যাটরা পাবে ১৯৩টি। সিনেটে ৬টি বেশি আসন জিতে রিপাবলিকানরা হবে ৫১ এবং ডেমোক্র্যাট ৪৬, স্বতন্ত্র ১টি বেড়ে ৩। তাহলে কি হাউস-সিনেট দু’টোই রিপাবলিকানদের হাতে চলে যাবে? হয়ত তাই। তবে হাউসে রক্ষণশীল বাড়বে, কারণ ‘টি-পার্টির’ কিছু নেতা এবার জিতে আসছেন। ফলে রিপাবলিকান নেতারাও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন। কংগ্রেসের মেয়াদ দুই বছর, কিন্তু সিনেটের মেয়াদ ছয় বছর। গবর্নরদের মেয়াদ চার বছর, যদিও কয়েকটি স্টেটে ২ বছর। নিউইয়র্কসহ ৩৮টি স্টেটে গবর্নর নির্বাচন হচ্ছে। এর মধ্যে ভারমন্ট ও নিউ হ্যাম্পশায়ারের মেয়াদ দুই বছর, বাকিদের চার বছর। ৪৬টি স্টেট এ্যাসেম্বলীর নির্বাচনও একই সঙ্গে হচ্ছে। তাছাড়া রয়েছে ৪টি টেরিটোরিয়াল লেজিসলেচার এবং অসংখ্য স্থানীয় নির্বাচন। পূর্বাভাস ঠিক থাকলে এবার রিপাবলিকানরা জিতছেন এবং ২০১৬-তে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও জিতবেন। তবে আমেরিকানরা কিন্তু কংগ্রেস, সিনেট ও হোয়াইট হাউস একসঙ্গে কোন দলকে দিতে চান না। তাই শেষ কথা এখনই বলা যাবে না। তবু হোয়াইট হাউসে রিপাবলিকানরা আসছেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে। ওই ভাগ্যবান ব্যক্তিটি কে? ফ্লোরিডার সাবেক গবর্নর জেব বুশ, না নিউজার্সির বর্তমান গবর্নর ক্রিস ক্রিস্টি? এই মুহূর্তে ওই দু’টি নাম সামনে আছে। নির্বাচন এখনও দুই বছর বাকি, চূড়ান্ত করে কিছুই বলা যাবে না, তবে আপাতত জল্পনা-কল্পনা চলছে ওই দু’জনকে নিয়ে। বুশ পরিবারের সদস্য জেব মার্কিন প্রেসিডেন্ট হলে একই পরিবারে তিনজন প্রেসিডেন্ট হবেন, যা ঐতিহাসিক ঘটনা। বুশের মা বারবারা কিন্তু বলছেন, তিনি চান না তাঁর অপর পুত্র নির্বাচনে দাঁড়াক। কিন্তু ভাই বুশ বলছেন, মনে হচ্ছে জেব দাঁড়াচ্ছে। রতœগর্ভা বারবারা বুশ, স্বামী ও দুই পুত্র প্রেসিডেন্ট! না, এটা মধ্যপ্রাচ্যের মতো গায়ের জোরে বংশানুক্রমিক নয়, যোগ্যতা দিয়ে জনগণের ভোটে জিতে আসতে হবে। ক্রিস ক্রিস্টি ২০১২-তেই দাঁড়াতেন যদি না তাঁর বিরুদ্ধে ওই সময় ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বীর ‘লেনক্লোজ’ আন্দোলন হতো। তিনি এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসছেন। এ সময়ে তিনি ১৯টি স্টেটে রিপাবলিকান প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণায় ব্যস্ত আছেন। সময় এলে আরও প্রার্থী যে আসবেন না তা নয়। সময়ে তা দেখা যাবে। ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে এগিয়ে আছেন হিলারি ক্লিন্টন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বহুত দূর, এ নিয়ে লেখার সময় আছে। আপাতত দেখা যাক মধ্যবর্তী নির্বাচনে কি হয়! নিউইয়র্ক, ১ নবেম্বর ২০১৪।
×