ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

জনদুর্ভোগ চরমে সন্ধ্যার পর চট্টগ্রাম কুমিল্লা ময়ময়নসিংহ ও সিলেটে সরবরাহ শুরু

জাতীয় গ্রিডে দু’বার বিপর্যয় ॥ বিদ্যুতহীন দেশ

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ২ নভেম্বর ২০১৪

জাতীয় গ্রিডে দু’বার বিপর্যয় ॥ বিদ্যুতহীন দেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় গ্রিডে দুই দফা ত্রুটির কারণে শনিবার সারাদেশ বিদ্যুত বিপর্যয় নেমে আসে। সকালে ও বিকেলে দুই দফায় ভারত-বাংলাদেশ বিদ্যুত সরবরাহ লাইন ট্রিপ করায় সারাদেশ বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বেলা ১১টা ২৭ মিনিট প্রথম দফা বিপর্যয় কটিয়ে দুপুরের পর সীমিত পরিসরে বিদ্যুত সরবরাহ শুরু করা হয়। বিকেল ৪টা ২৭ মিনিটে ভারত- বাংলাদেশ বিদ্যুত সরবরাহ লাইন পুনরায় চালুু করতে গেলে জাতীয় গ্রিডে আবারও ত্রুটি দেখা দেয়। সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ এবং সিলেট এলাকায় পুনরায় সরবরাহ শুরু করা হয়। সন্ধ্যায় পিডিবি জানায়, ঢাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। পিডিবির তরফ থেকে আশা করা হচ্ছে, রাতের মধ্যে ঢাকার পরিস্থিতি পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসবে। তবে সারাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগতে পারে। এদিকে দেশের কোথাও বিদ্যুত না থাকায় সারাদেশ থমকে দাঁড়ায়। শিল্পকারখানার চাকা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি হাসপাতাল ও বাসাবাড়িতে মানুষকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। গভীর উদ্বেগ নিয়ে সারাদেশের মানুষ বিদ্যুতের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। বিগত ২০০৭ সালের সিডরের পর শনিবার আবারও এভাবে সারাদেশে একসঙ্গে বিদ্যুত বিপর্যয় ঘটেছে । পিডিবি এবং পিজিসিবি সূত্র বলছে, বাংলাদেশ এবং ভারতের বিদ্যুত সিস্টেম সমন্বয় করার জন্য ব্যাক টু ব্যাক সাবস্টেশন করা হয়েছে। এখানে ভারতের সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে বাংলাদেশের সরবরাহ ব্যবস্থার সাংঘর্ষিক অবস্থা সৃষ্টি হবে না। এছাড়া কোন নির্দিষ্ট বিদ্যুত কেন্দ্র ট্রিপ করলে ব্যাকআপ রিলে সিস্টেম থাকে। তাতে অন্য লাইনগুলো ট্রিপ করার কথা নয়। কিন্তু এক্ষেত্রে পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারাটা পিজিবির এক ধরনের ব্যর্থতার পরিচয় বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জামায়াতের হরতাল, নাশকতার সঙ্গে এই ঘটনার কোন সম্পৃক্ততা আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বলছে, জাতীয় বিদ্যুত সঞ্চালন লাইনের সার্কিট ব্রেকারে ত্রুটি দেখা দিলে বেলা ১১টা ২৭ মিনিটে ভারত-বাংলাদেশ বিদ্যুত সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। এক সঙ্গে জাতীয় গ্রিডে ৪৬২ মেগাওয়াট বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে বিপর্যয় দেখা দেয়। একে একে অন্যান্য লাইন ট্রিপ করতে থাকে। এতে সারাদেশের সকল বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে বিকেল ৪টা ২৭ মিনিটে ভারত-বাংলাদেশ সাবস্টেশন চালু করতে গেলে লাইন আবারও ট্রিপ করে। ফলে দুপুরের পর থেকে আংশিক স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও বিকেলে আবারও বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে সারাদেশ। সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে চট্টগ্রাম এবং সিলেটে বিদ্যুত সরবরাহ পুনরায় শুরু হয়। বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য উৎপাদন শাহিনুল ইসলাম খান সন্ধ্যায় জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা চট্টগ্রাম এবং সিলেট এলাকার বিদ্যুত চালু করেছি। আশুগঞ্জ এবং ঘোড়াশালের বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো চালু করা হচ্ছে। এই বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো চালু করা হলে ঢাকায় সরবরাহ শুরু করা হবে। এর আগে দুপুর ১২টা ২৬ মিনিট থেকে সিলেট এবং ময়মনসিংহ এলাকায় সীমিত পরিসরে বিদ্যুত সরবরাহ শুরু হয়। ঢাকায় দুপুরের পর থেকে ধানম-ি, বারিধারা এবং উত্তরা এলাকায় আংশিক সরবরাহের মাধ্যমে বিদ্যুত সরবরাহ পুনরায় শুরু হতে শুরু করে। বিকেল চারটার দিকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র চালু করা হয়। বিকেল চারটা ২৭ মিনিটে পুনরায় ভারত-বাংলাদেশ বিদ্যুত লাইন চালু করা হলে আবার লাইন ট্রিপ করে। এতে সারাদেশের বিদ্যুত ওই সময় আবার চলে যায়। সম্পূর্ণ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে কত সময় অপেক্ষা করতে হবে বলে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এবং পাওয়ারগ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)-এর কেউ নির্দিষ্ট করতে বলতে পারছেন না। তবে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে পর্যায়ক্রমে সরবরাহ স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টার বলছে, গ্রিডে ত্রুটির কারণে বেলা ১১টা ২৭ মিনিটে সারাদেশের বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরপরই সারাদেশের সরবরাহ স্বাভাবিক করার চেষ্টা শুরু করা হয়েছে। বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুসহ বিদ্যুত বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তারা রামপুরাতে ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টারে ছুটে যান। বেলা তিনটার দিকে ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রতিমন্ত্রী সারাদেশে বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন যান্ত্রিক ত্রুটির সাময়িক সমস্যা শুরু হয়েছে। ত্রুটির কারণ অনুসন্ধানে বিদ্যুত বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ কায়কাউয়াসকে প্রধান করে সাত সদস্যর একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটিকে ত্রুটির কারণ অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুম আল বেরুনী শনিবার বিকেলে এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, ভারত- বাংলাদেশ বিদ্যুত সরবরাহ লাইনে ত্রুটির কারণে হঠাৎ করে ৪৬২ মেগাওয়াট বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে যে ফ্রিকোয়েন্সিতে বিদ্যুত সরবরাহ করা হচ্ছিল তা সম্ভব হয়নি। একে একে সব লাইন ট্রিপ করে সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। বিকেলে আবারও লাইন ট্রিপ করে। সন্ধ্যায় এই রিপোর্ট লেখার সময় ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টার থেকে এক কর্মকর্তা জানান, তাদের অফিসে কয়েক শ’ মানুষ জড়ো হয়ে নানা ধরনের দিকনির্দেশনা দিচ্ছে। এতে পিজিসিবির কর্মকর্তারা কাজ করতে পারছেন না। ভারত-বাংলাদেশ বিদ্যুত সরবরাহ লাইনের নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন বিকেলে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে টেলিফোনে জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা নিশ্চিত নই কেন লাইন ট্রিপ করল। তবে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। আমাদের অথবা ভারতের কোন কারণে লাইন ট্রিপ করেছে কিনা তা খাতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি জানান, বিকেল ৪টা ২৭ মিনিটে আবারও সাবস্টেশন চালু করার চেষ্টা করলে লাইন ট্রিপ করে। সারাদেশে বিদ্যুত না থাকায় জনজীবনে বিপর্যয় নেমে আসে। হাসপাতালগুলোতে বিদ্যুত না থাকায় চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে। রাজধানীর সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালগুলো বিকল্প পন্থায় সেবা দেয়ার চেষ্টা করলেও তা ছিল অপ্রতুল। হাসপাতালগুলো ঘুরে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ দেখা গেছে। সব থেকে বেশি সমস্যা হয়েছে বহুতল ভবনে। কোন কোন ক্ষেত্রে দীর্ঘক্ষণ জেনারেটর চালালেও ঠিকমতো লিফট চলেনি। এতে ডাক্তার এবং রোগীকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। কোন ধরনের প্যাথোলজিক্যাল পরীক্ষাও করা সম্ভব হয়নি। পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থা এত বেশি সময় ধরে ভেঙ্গে পড়েনি আর আগে। সকাল থেক গভীর রাত পর্যন্ত বিদ্যুত না থকায় মানুষ বার বার বিদ্যুত অফিসে ফোন করেছে। কিন্তু স্থানীয় বিদ্যুত অফিসগুলোও কোন খবর জানাতে পারেনি। সন্ধ্যার পর গোটা রাজধানী এক ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়। বিদ্যুত না থাকায় পানি সরবরাহও বিঘিœত হয়। পানি না থাকায় বাসাবাড়িতে রান্না করা সম্ভব হয়নি। হোটেলগুলোতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে মানুষকে খাবার কিনতে হয়েছে। কোন কোন এলাকায় রাতেরবেলা মোমও পাওয়া যায়নি। এতে মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়তে থাকে। রাতে কখন বিদ্যুত ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে তা নিয়েও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ছিল নগরবাসী। এতে তীব্র পানির সঙ্কটে পড়তে হয় নগরবাসীকে। বিদ্যুত সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় ইন্টারনেট লাইনও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। নিজস্ব বিদ্যুত ব্যবস্থা নেই এমন সব শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যায়। বিশেষ করে সরকারী শিল্পকারখানায় একেবারে কাজ হয়নি। চট্টগ্রাম অফিস জানিয়েছে, সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে বিদ্যুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে চট্টগ্রামে। একে একে বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো চালু করা হচ্ছে। পিজিসিবির চট্টগ্রাম সিস্টেম কন্ট্রোল সূত্র জানায়, বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে গ্রিড লাইন ফেল করায় চট্টগ্রামের ৯টি বিদ্যুত সাবস্টেশনই বিদ্যুতহীন হয়ে পড়ে। এতে শিল্প উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্রাহকরাও বিদ্যুত পাননি। তবে ইপিজেডের ননগ্রিড অর্থাৎ প্রাইভেট সেক্টরে উৎপাদিত বিদ্যুত দিয়ে বেশকিছু শিল্প ইউনিট চালু ছিল। এসব উৎপাদন কেন্দ্র পাঁচ থেকে দশ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আঞ্চলিক সরবরাহ ব্যবস্থা করে থাকে। কিন্তু জাতীয় গ্রিড ফেল করায় দেশের সর্বত্র বিদ্যুত ছিল না। বেলা সোয়া ৪টায় কাপ্তাই জলবিদ্যুত কেন্দ্রের ১ নম্বর ইউনিট চালু হলে মদুনাঘাটে প্রথম সরবরাহ পাওয়া যায়। এরপর রাউজান তাপবিদ্যুত কেন্দ্র, শিকলবাহা, দোহাজারী ও হাটহাজারী বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্রে জরুরী বিদ্যুত সরবরাহ দেয়া হয়। এসব কেন্দ্রও রাতের মধ্যে সচল করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। চট্টগ্রামে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুত সরবরাহ সন্ধ্যার আগে সম্ভব হয়নি। শুধুমাত্র গ্রিড এবং ৩৩ কেভি সাবস্টেশনগুলো সচল করা হয়েছে। এর পরবর্তীতে অন্যান্য সাবস্টেশন চালু করে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুত দেয়া হবে। এদিকে, গ্রিড লাইন ফেল করার পর থেকে চট্টগ্রামের ৯৫ ভাগ এলাকা অন্ধকারে ছিল সন্ধ্যা পর্যন্ত। এখানে সরবরাহের জন্য বিদ্যুত পাওয়া যায় মাত্র ১০ মেগাওয়াট। এ বিদ্যুত দিয়ে সাব স্টেশনগুলো প্রাথমিকভাবে সচল করা হয়। নগরীতে পিক আওয়ারে এখন বিদ্যুত চাহিদা ৬৫০ মেগাওয়াট। প্রকৌশলীরা আশা করছেন, রাতের মধ্যে অন্তত ২শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত সরবরাহ করা যাবে। বাকি দুই-তৃতীয়াংশের বেশি লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। শনিবার বিকেলে ৫ ঘণ্টা পর গ্রিড চালু হলেও শুধু জরুরী স্থাপনাগুলোতে বিদ্যুত দেয়া হয়। এতে বিদ্যুতহীন থাকায় দিনভর নগরবাসীকে বেগ পেতে হয়েছে। সাধারণ বাসাবাড়িগুলোতে আইপিএসও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিদ্যুতহীন হয়ে পড়ে। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ গ্রাহকরা জেনারেটরও চালু রাখতে পারেনি। দীর্ঘ সময় সার্ভিস দিতে না পারায় বিকেল থেকে মোবাইল নেটওয়ার্কগুলো ফেল করতে শুরু করে। মোবাইল অপারেটরদের জেনারেটর ও ব্যাটারি সিস্টেম বিকল হয়ে যায় টানা বিদ্যুতের অভাবে। সন্ধ্যার পরও বিভিন্ন এলাকা বিদ্যুতবিহীন হয়ে পড়ায় টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক ব্যবস্থায় বিপর্যয় নেমে আসে। বিদ্যুতের কারণে অনেক গার্মেন্টস শিল্প শনিবার আগেভাগেই ছুটি ঘোষণা করা হয়। সন্ধ্যার পরও অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুতবিহীন থাকায় রাস্তার বাতিগুলো বন্ধ থাকায় নগরী ছিল ভুতুড়ে। এতে রাস্তাঘাটে যানবাহনের সংখ্যাও কমে যায়। আবার সিএনজি গ্যাস স্টেশনগুলোও বিদ্যুতের অভাবে যানবাহনে গ্যাস দিতে পারেনি। বিদ্যুত না থাকায় সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন আবাসিক গ্রাহকরা। বিদ্যুতের অভাবে অনেক বহুতল ভবনে পানির সঙ্কট সৃষ্টি হয়। চট্টগ্রাম ইপিজেডে প্রাইভেট সেক্টরের বিদ্যুত দিয়ে কিছু কারখানা স্বাভাবিক উৎপাদন রেখেছে। পিজিসিবির প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রামে আজ রবিবারের মধ্যে বিদ্যুত উৎপাদন উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি পাবে। জাতীয় গ্রিডে স্বাভাবিক বিদ্যুত যোগান না দেয়া পর্যন্ত বিভিন্ন সাব স্টেশনকে রেশনিংয়ের মাধ্যমে সরবরাহ টিকিয়ে রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এতে আজ রবিবারও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে তীব্র লোডশেডিং অব্যাহত থাকতে পারে। স্টাফ রিপোর্টার ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে জানান, আকস্মিকভাবে বিদ্যুতের জাতীয় সঞ্চালন লাইনে ত্রুটি দেখা দেয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আশুগঞ্জ, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নরসিংদী, ঢাকার একাংশ ও সিলেট অঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলায় বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। শনিবার দুপুর পৌনে ১২টার আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের সরবরাহ লাইন থেকে বিদ্যুত ফ্লপ করায় সব ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ হয়। দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ ছিল। তবে দুপুর ১টায় বিশেষ ব্যবস্থায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কিশোরগঞ্জে বিদ্যুত সরবরাহ শুরু করা হলেও ৫-৭ মিনিট পর পর সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। দেশের অন্যতম বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠান আশুগঞ্জ পাওয়ার কোম্পানি থেকে ১ হাজার ৭শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন হতো। সরকারী-বেসরকারী মিলিয়ে ১৩টি বিদ্যুত প্লান্ট রয়েছে এখানে। এর মধ্যে সচল ১০টির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে টানা ৫-৬ ঘণ্টা ধরে বিদ্যুত না থাকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে মারাত্মক দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে শহরে বিদ্যুত ও গ্যাস চালিত সিএনজি অটোরিক্সা চলাচল কমে গেছে। স্টাফ রিপোর্টার ঈশ্বরদী থেকে জানান, বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিডে বড় ধরনের ত্রুটি দেখা দেয়ায় শনিবার বেলা এগারটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ঈশ্বরদীসহ দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে ঈশ্বরদী ইপিজেডসহ উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের শত শত মিল কল-কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এতে ব্যবসায়ীদের অন্তত কয়েক শ’ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। বিদ্যুত বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ঈশ্বরদী ইপিজেডের একটি ফ্যাক্টরি বাদে তেরটি ফ্যাক্টরির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। অবস্থা বেগতিক দেখে কয়েকটি ফ্যাক্টরির শ্রমিকদের ছুটি দেয়া হয়। পাঁচ ঘণ্টা বিদ্যুত বন্ধ থাকায় সকল সেক্টরে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে ঈশ্বরদীর বিদ্যুতের আবাসিক কর্মকর্তা উৎপল কুমার রায়সহ একাধিক ব্যবসায়ী জানান। স্টাফ রিপোর্টার রাজশাহী থেকে জানান, শনিবার বেলা সোয়া ১১টার পর থেকে রাজশাহী অঞ্চলেও বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। দীর্ঘ সময় বিদ্যুত না আসায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে অফিস আদালত ও ব্যবসা কেন্দ্রে কর্মরত সাধারণ মানুষ। জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুত বিপর্যয়ের কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে অফিস আদালত, দোকানপাট, ফিলিং স্টেশন, ফটোল্যাব ও ফটোস্ট্যাটের দোকান দুপুরের পর থেকে বন্ধ হয়ে গেছে। রাজশাহী পিডিবির পক্ষ থেকে শহরে মাইকিং করা হয়। বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারাও সঠিক কারণ জানাতে পারছে না। ফলে দুপুরের পর থেকে অগত্যা শহরে মাইকিং শুরু হয়েছে। মাইকে ঘোষণা দেয়া হচ্ছে- জাতীয় গ্রিড ফেল করায় বিদ্যুত বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। তবে কখন নাগাদ বিদ্যুত ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে এ নিয়ে কোন তথ্য জানাতে পারছেন না তারা। এদিকে টানা বিদ্যুত না থাকায় শহরের অনেক বাড়িতে পানি শূন্য হয়ে পড়েছে। বিদ্যুতনির্ভর অনেক বাড়িতে দুপুরের রান্না মাঝ পথে আটকে গেছে। পিডিপি রাজশাহীর প্রধান প্রকৌশলী এম মাসুদ আল ফারুক জানান, সিডরের পর এই প্রথম সারাদেশে একসঙ্গে বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তিনি বলেন, কেন্দ্রে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তবে কখন নাগাদ এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তা বলা যাচ্ছে না। বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে সাময়িক এ সমস্যার জন্য গ্রাহকদের সহনশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। স্টাফ রিপোর্টার ময়মনসিংহ থেকে জানান, ময়মনসিংহ শহরসহ পুরো জেলার বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ ছিল। এ সময় ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রোগীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হয়। একই ভোগান্তির কবলে পড়েন শহরবাসী। এ সময় পানি সরবরাহ বন্ধ থাকায় ও অনেক বাসাবাড়িতে রান্নাবান্না নিয়ে ভোগান্তির শিকার হন শহরবাসী। ময়মনসিংহ কেওয়াটখালি পাওয়ার গ্রিডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক নন্দী জানান, জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুত বিপর্যয়ের পর ময়মনসিংহস্থ রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল) থেকে বিকল্প ব্যবস্থায় জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুত সরবরাহ করা হচ্ছিল। এ সময় ময়মনসিংহ শহরের আংশিক এলাকায় পালা করে বিদ্যুত সরবরাহ করা হয়। কিন্তু এক পর্যায়ে আরপিসিএলতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়ায় এই সরবরাহেও বিঘœ ঘটলে ফের অচলাবস্থা দেখা দেয়। আরপিসিএলের স্থানীয় একজন প্রকৌশলী জানান, হঠাৎ করে গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় পুরো সিস্টেমসহ উৎপাদন ব্যবস্থা ব্ল্যাক আউট হয়ে ট্রিপ করে আরপিসিএলের এই ১৪০ মে.ও বিদ্যুত কেন্দ্র। তবে গ্যাসে চাপ স্বাভাবিক হলে আবার তারা জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুত সরবরাহ করতে পারবে। রিপোর্ট পাঠানোর সময় (সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটে) ময়মনসিংহ শহরের কিছু ফিডারে বিদ্যুত সরবরাহ করা হয়েছে।
×