ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তির আশা চূর্ণ!

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ২ নভেম্বর ২০১৪

মুক্তির আশা চূর্ণ!

নাইজিরিয়ায় ইসলামপন্থী গ্রুপ বোকো হারামের হাতে অপহৃত স্কুল ছাত্রীদের মুক্তির ক্ষীণ আশা শেষ পর্যন্ত চূর্ণ হয়ে গেছে। দুসপ্তাহ আগে নাইজিরীয় সেনাবাহিনীর স্টাফ প্রধান ও দেশের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ঘোষণা করেছিলেন, জঙ্গী দলের বোকো হারামের সঙ্গে এক অস্ত্রবিরতি চুক্তি হয়েছে। অন্য একজন শীর্ষ সরকারী কর্মকর্তা বলেছিলেন, অপহৃত স্কুল ছাত্রীদের মুক্তির ব্যাপারে শীঘ্র একটি চুক্তি হবে। তাদের ভাগ্যে কি ঘটে, সে দিকে বিশ্বের দৃষ্টি আকৃষ্ট ছিল। বিপদ কেটে যাওয়ার কথা ছিল শীঘ্রই। কিন্তু বোকো হারাম নেতা আবুবকর শেকাউ এ কথিত চুক্তির ব্যাপারে কিছুই বলেননি। অন্যদিকে সরকারী মুখপাত্রও একইভাবে নীরব রয়েছেন। তাই ওই ধরনের সরকারী ঘোষণা ফাঁকা বলে প্রমাণিত হয়েছে। খবর এএফপি ও নিউইয়র্ক টাইমস অনলাইনের। নাইজিরীয় সংবাদে বলা হয়, শুক্রবার প্রকাশিত ভিডিও টেপ বার্তায় আবুবকর শেকাউ কোন ধরনের অস্ত্রবিরতির সব ধারণা বাতিল করে দিয়ে বলেছেন, গত বসন্তে তার গ্রুপ অপহৃত ২শ’ ১৯ স্কুল ছাত্রীকে ইসলামে ধর্মান্তরিত করে বিয়ে দিয়েছে। তার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, তাদের সবাই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে এবং তারা এখন বিবাহিতা। কেউ যদি এরকম বলে যে, মেয়েদের মুক্তি দেয়ার বিষয়টি পরিকল্পনাধীন রয়েছে তবে তা হবে দিবাস্বপ্ন। তাদের আর ফিরিয়ে দেয়া হবে না। ভিডিও বার্তায় তিনি আরও বলেন, অস্ত্র বিরতির কোন চুক্তিই হয়নি। কে সম্মতি প্রকাশ করেছে অস্ত্রবিরতির জন্য? কেউ তো আন্তরিক নয়। অস্ত্রবিরতি ঘোষণার পর থেকে নাইজিরিয়ার উত্তর-পূর্ব বোকো হারামের হামলা ও অপহরণ অব্যাহত রয়েছে। মাইদুগুরির কাছে বোকো হারামের ঘাঁটির ঠিক দক্ষিণে আদামাওয়া প্রদেশে কমপক্ষে ৬০ তরুণীকে অপহরণ করেছে জঙ্গীরা। বাসিন্দারা ও রোমান ক্যাথলিক যাজক বলেছেন, যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরদিনই এ অপহরণ ঘটনা ঘটে। শেকাউ তার ভিডিও বার্তায় বলেছেন, জুলাইয়ে আদামাওয়ায় ইসলামপন্থীরা যাদের অপহরণ করে, তাদের মধ্যে ১ জন জার্মান নাগরিক রয়েছে। মাইদুগুরির উত্তরে একটি গ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে এ সপ্তাহে হামলা চালিয়েছে জঙ্গীরা। এসব হামলায় কয়েকজনকে হত্যা করা হয় এবং একটি মার্কেট ও থানায় অগ্নিসংযোগ করা হয়। বুধবার আরও একটি মারাত্মক হামলার খবর পাওয়া গেছে। এ হামলা করেছে তারা ক্যামেরুন সীমান্তের কাছে মুবি শহরে। সরকারের যুদ্ধবিরতি ঘোষণার ঠিক পরপর প্রেসিডেন্ট গুডলাক জোনাথন ঘোষণা করেন যে, তিনি আগামী বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। বোকো হারামের বর্বরতা বন্ধে বা স্কুল ছাত্রীদের ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থতার জন্য তার বিরুদ্ধে সমালোচনা চলছে তীব্রভাবে। দেশে পরিস্থিতির কোন অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। মেয়েরা এখনও নিখোঁজ হয়ে রয়েছে। ক্যামেরুন সীমান্ত সংলগ্ন উত্তর পূর্বাঞ্চলে বিশাল এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে বোকো হারাম এবং এখনও গ্রামবাসীদের অপহরণ ও হত্যা অব্যাহত রেখেছে জঙ্গীরা। এ সপ্তাহে মানবাধিকার প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়, ২০০৯-এ বিদ্রোহ শুরু করার পর জঙ্গীরা অন্তত ৫শ’ নারীকে অপহরণ করেছে। জঙ্গীদের কাছ থেকে পালিয়ে আসা এক নারীর বক্তব্য থেকে তাদের ওপর জঙ্গীদের বর্বর নির্যাতনের চিত্র ওঠে এসেছে এ প্রতিবেদনে। এ অপহৃত মেয়েদের জঙ্গীদের সঙ্গে জোর করে বিয়ে দেয়া হয়। জঙ্গলে জঙ্গীদের শিবিরে তাদের জন্য রান্না ও গৃহস্থালীর কাজ করতে হয় এবং তাদের ইসলামে ধর্মান্তরিত করা হয়।
×