ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মহাশূন্য যুগের জন্মদিন ॥ স্পুৎনিকের উৎক্ষেপণ

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১ নভেম্বর ২০১৪

মহাশূন্য যুগের জন্মদিন ॥ স্পুৎনিকের উৎক্ষেপণ

২০১৪ সালের ৪ অক্টোবর। ঠিক এই দিনটিতে ১৯৫৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন স্পুৎনিক-১ উৎক্ষেপণ করেছিল। পৃথিবীর চারদিকে ভ্রমণও করে সে। ছিল তো পৃথিবী থেকে পাঠানো প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ। অনেক মহাশূন্যবিষয়ক ইতিহাসবিদের মতে, ঠিক এই দিনটিই তাই সূচনা করে ‘মহাশূন্য যুগ’ নামে নতুন এক যুগের। স্পুৎনিক-১ ছিল এ্যালুমিনিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও টাইটেনিয়ামের সংমিশ্রণ তৈরি এ্যালুমিনিয়ামের সঙ্কর দিয়ে তৈরি ঝকঝকে গোলাকার বলের মতো। ব্যাসে ৫৮ সেন্টিমিটার বা ২৩ ইঞ্চি, ওজন মাত্র ১৮৪ পাউন্ড বা প্রায় ৮৩.৭ কিলোগ্রাম। পৃথিবীতে রেডিও পালস বা সঙ্কেত পাঠানোর জন্য ছিল চারটে এনটেনা এবং বিশ্বস্ততার সঙ্গে তারা কাজটি পালনও করে। ৪ অক্টোবর থেকে পরবর্তী আরও ২১-২২ দিন ধরে পৃথিবীর মানুষ রেডিওতে এনটেনা চারটির অপ্রগলভ ‘বিপ বিপ’ স্পন্দন শোনে। যদিও স্পুৎনিকের স্পন্দনকে ‘বিপ বিপ’ বলা হয়, আসলে ঠিক বিপ বিপÑ ও নয়। স্পুৎনিকের অডিও স্পন্দন নিচের ইউটিউবে ধরা রয়েছে। শুনলে রোমাঞ্চের অনুভূতি ঠিকই পাওয়া যায়। স্পুৎনিকের ভেতরটি ছিল বায়ুচাপ নিয়ন্ত্রিত, আর তাকে পাঠানো হয় পাঁচটি বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের কাজ সম্পন্ন করার জন্য। এগুলো হলো : ১. পৃথিবীর কক্ষপথে কৃত্রিম ‘চাঁদ’ বসাতে যে প্রক্রিয়াটির ব্যবহার হচ্ছে, সেটি পরীক্ষা করা। ২. পৃথিবীর বায়ুম-লের ঘনত্ব সংক্রান্ত তথ্যাদি সংগ্রহ করা, কক্ষপথে স্পুৎনিকের জীবনকালের মেয়াদ থেকে হিসাবটি করা হয়। ৩. কক্ষপথ অনুসরণের জন্য রেডিও এবং অপটিক্যাল পদ্ধতির পরীক্ষা করা। ৪. পৃথিবীর বায়ুম-লের মধ্য দিয়ে পরিভ্রমণকালে রেডিও তরঙ্গের পরিণতি কী হয়, তা নির্ধারণ করা। ৫. পৃথিবীকে পরিভ্রমণরত যে উপগ্রহগুলো ব্যবহার হবে, তাদের অভ্যন্তরীণ চাপের মূল সূত্রগুলো পরীক্ষা করা। স্পুৎনিক মিশনের হোমওয়ার্ক থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে পরবর্তী পদক্ষেপ হচ্ছে মহাশূন্যে জীবিত কিছু পাঠানো। (১৯৫৭ সালের ৩ নবেম্বর স্পুৎনিক-২ পাঠানা হয়, সঙ্গে অপেক্ষাকৃত ভারি পেলোড হিসেবে লাইকা নামক এক কুকুরকেও পাঠানো হয়েছিল)। স্পুৎনিক-১-এর অভ্যন্তরে শুকনো নাইট্রোজেন পূর্ণ করে চাপকে ১.৩ বায়ুম-লীয় চাপে নিয়ে আসা হয়। চাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি ব্যারোমিটার সুইচ দেয়া হয়, ফলে উপগ্রহটির ভেতরকার চাপ কমে ১৩০ কিলোপাস্কাল (বায়ুম-লীয় চাপের একক) হলেই সুইচটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সক্রিয় হয়ে উঠবে, সে সঙ্গে রেডিও সঙ্কেতের স্থায়িত্বও বদলে যাবে। উপগ্রহটির ভেতরে ছিল মাত্র এক ওয়াটের একটি রেডিও সঙ্কেত প্রেরণ ইউনিট, ওজন ছিল সাড়ে তিন কিলোগ্রাম। আরেকভাবে বলতে পারি যে, এই সাড়ে তিন কেজিই ছিল স্পুৎনিকের পেলোড। রেডিও সঙ্কেত প্রেরণ ইউনিটটি দুটো কম্পনে -২০০০৫ মেগাহার্স ও ৪০০০২ মেগাহার্সে কাজ করে। ভেতরকার পরিবেশ যখন স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ও চাপে অবস্থান করে, উপগ্রহ তখন প্রথম কম্পনে বা অন্যভাবে ঠিক ২০ মেগাসাইকেলে, পৃথিবীতে রেডিও সঙ্কেত পাঠানোর ফলে যে ঠিক একই পরিমাণের স্থিতিকালের বিরতি ঘটছে, সেই বিরতিকালে সঙ্কেত পাঠানোর দায়িত্ব নিয়ে নেয় দ্বিতীয় কম্পন। এভাবে বিকল্পরূপে একবার ২০ মেগাসাইকেলে এবং পর মুহূর্তে ৪০ মেগাসাইকেলে উপগ্রহটির ‘বিপ বিপ’ শব্দ শোনা গেছে। উৎক্ষেপণের আগেই সোভিয়েতরা স্পুৎনিক সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্যাদি সারাপৃথিবীকে জানিয়ে দিয়েছিল। ইলেকট্রনিক কমিউনিকেশন তখনও শৈশব অবস্থা অতিক্রম করেনি। ফলে পৃথিবীর অনেক দেশেই, অপেশাদার এবং পেশাদারের দল বায়নোকুলার, টেলিস্কোপ নিয়ে পর্যবেক্ষণ স্টেশন স্থাপন করে। ‘মুন ওয়াচ’ নামে প্রজেক্টও তৈরি হয়ে যায়। সাকুল্যে ১৫০টি পর্যবেক্ষণ স্টেশন গড়ে ওঠে। স্পুৎনিককে দেখার জন্য উৎসাহীরা অতি প্রত্যুষে ও গোধূলিবেলায় চোখে বায়নোকুলার ও টেলিস্কোপ লাগিয়ে আকাশের দিকে বিরামহীন তাকিয়ে থাকে। সোভিয়েতরা পেশাদার-অপেশাদার নির্বিশেষে সবাইকে স্পুৎনিকের ‘বিপ, বিপ’কে ম্যাগনেটিক টেপে টেপবন্দী করে রাখার অনুরোধ করে! সেইকালে যাদের শর্টওয়েভ রেডির ছিল, তারা প্রথমে ২০ মেগাসাইকেলে রেডির টিউন করে। এই কম্পনে সঙ্কেত পাওয়া মাত্রই, পরি কি মরি করে রেডিওকে সামান্য উচ্চ কম্পনে টিউন করে নেয়। সেই আমলে রেডিও ‘ম্যাস মিডিয়ার’ পণ্যে পরিণত হয়নি বলে, একটি রেডিওর অধিকারী হওয়া ছিল বিরাট একটি ব্যাপার। যুক্তরাষ্ট্রে আরসিএ নামক একটি রেডিও কোম্পানি লং আইল্যান্ডে স্পুৎনিকের স্পন্দন প্রথম রেকর্ড করে এবং স্কুপ নিউজটিকে প্রচারের জন্য ছুটে চলে যায় ম্যানহাটনে অবস্থিত এনবিসি রেডিও অফিসে। স্পুৎনিক রাতারাতি সেলিব্রিটিতে পারিণত হয়। রেডিও সঙ্কেত, তাপমাত্রা ও চাপের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত থাকায়, বাড়তি পাওয়া হিসেবে পরিষ্কার হয়ে যায় যে কোন উল্কাপি- স্পুৎনিককে ছিদ্র করে দেয়নি। উপগ্রহের ভেতরে, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি ফ্যান, একটি দ্বৈত বা ডুয়াল থার্মাল সুইচ এবং একটি কন্ট্রোল থার্মাল সুইচের ব্যবস্থা রাখা হয়। ফলে ভেতরকার তাপমাত্রা বেড়ে ৩৬ সেলসিয়াস হলেই ফ্যানটি স্বয়ংক্রিয় উপায়ে চালু হয়ে যেত, আবার তাপমাত্রা কমে ২০ সেলসিয়াসের নিচে নেমে এলে ডুয়াল থার্মাল সুইচটি ফ্যানটিকে ‘অফ’ করে দিত। কিন্তু তাপমাত্রা বেড়ে যখন ৫০ সেলসিয়াস হয়ে যেত বা কমে শূন্যের নিচে নেমে যেত, তখন আরেকটি কন্ট্রোল থার্মাল সুইচ সক্রিয় হয়ে যেত এবং রেডির সঙ্কেতের স্থায়িত্বও বদলে দিত। আপাতদৃষ্টে, তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাটি ছিল বেশ সাদামাটা। পৃথিবীর কক্ষপথে আসীন হওয়া মাত্রই স্পুৎনিকের ট্রান্সমিটার থেকে পাঠানো সঙ্কেত কামচাটকা উপদ্বীপে অবস্থিত মনিটরিং স্টেশনটি সুন্দর শুনতে পায়। মহাউত্তেজিত হয়ে পড়ে সমস্ত টিম! এত হৈচৈ হট্টগোল করে আনন্দ করার মতো বিষয়! কিন্তু সের্গেই পাভলোভিচ করোলিয়েভ (রুশ মহাশূন্য প্রজেক্টের প্রাণপুরুষ) টিমের সবাইকে ডেকে বললেন, পৃথিবীর দক্ষিণ-পশ্চিমাংশ থেকে স্পুৎনিকের সঙ্কেত না পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা কর তোমরা। কারণ, খুবই সহজ। দক্ষিণ-পশ্চিমাংশ থেকে পাঠানো সঙ্কেত নিশ্চিতভাবে বলে দেবে যে চকচকে গোল মহাযানটি পৃথিবীর চারদিকে নিজ কক্ষপথে সত্যি সত্যিই সাফল্যের সঙ্গে ঘুরে এসেছে একবার। খুব সম্ভব স্পুৎনিকের দ্বিতীয় পরিভ্রমণকালে, ইংল্যান্ডের ট্যাটসফিল্ডে অবস্থিত বিবিসির মনিটরিং স্টেশন স্পুৎনিকের টেলিমেট্রি সঙ্কেত (স্বয়ংক্রিয় কমিউনিকেশন পদ্ধতির মাধ্যমে প্রেরিত উপাত্ত) গ্রহণ করে। ফলে সোভিয়েত ইউনিয়নের সীমানার বাইরে মহাযানের প্রথম সঙ্কেত গ্রহণের গৌরব অর্জন করে বিবিসি। প্রায় একই সময়ে পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিও সঙ্কেত শুনতে পায় এবং রেকর্ডবন্দী করে। সফল রুশ উৎক্ষেপণ যুক্তরাষ্ট্রকে হতভম্ব বিমূঢ় করে দেয়। দেশজুড়ে বিস্ময়ের মাত্রা ও সরকারী পর্যায়ের উদ্বেগ শঙ্কা বড় হেডলাইনগুলো দখল করে রাখে। অবস্থাকে আরও ঘোরতর করে তোলে যখন প্রথম কয়েকদিন স্পুৎনিককে যথার্থভাবে ট্র্যাকই করতে পারছিল না। স্পুৎনিকের উৎক্ষেপণকালে ‘আন্তর্জাতিক ভূপদার্থবিদ্যার বছর’ নামক একটি ঐতিহাসিক আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক প্রজেক্ট চলমান ছিল। (যে ঠা-াযুদ্ধ বৈজ্ঞানিক তথ্যাদির লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছিল, এই প্রজেক্টের মাধ্যমেই প্রথমবারের মতো অবরোধের বাধা তুলে নেয়া হয়)। তাই সাধারণভাবে ধরে নেয়া হয় যে, মহাযানটিকে ১০৮ মেগাহার্স কম্পনে ট্র্যাক করা যাবে। ভুল ধারণার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মিনিট্র্যাক সিস্টেম প্রথম কয়েকদিন কোন কাজেই আসেনি। পরে অবশ্য যথার্থ কম্পনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়া হয়। তবে কপাল ভাল যে অপেশাদার অপারেটরদের মনিটরিংয়ের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক আহ্বান আগাম দেয়া হয়েছিল। কারণ এই অপেশাদার রেডিও অপারেটররাই মূলত বিজ্ঞান সমাজ ও সরকারী সংস্থাগুলোকে গৃহীত সঙ্কেতের যোগান দেয় এবং কক্ষপথের বিশ্লেষণ ও বহির্বিশ্বের বায়ুম-ল সম্বন্ধে পদার্থবিদ্যা সংশ্লিষ্ট যোগসূত্র নির্ধারণে সাহায্য করে। অর্থাৎ অপেশাদার রেডিও অপারেটররা প্রথম যুগের মহাশূন্য ফ্লাইটে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্পুৎনিক উপগ্রহটির রাত্রিকালীন ভ্রমণকালে ২০.০০৫ মেগাহার্সের টেলিমেট্রি সঙ্কেতকে বাধামুক্ত নিখুঁত রাখার জন্য তারা কতবার যে তাদের ২০ মেগাহার্সে সম্প্রচারিত নিজস্ব অনুষ্ঠানাদি বন্ধ রেখেছে, বর্তমানে তার কোন হিসাব জানা নেই। ১৯৫৭ সালের সেই লগ বইগুলো আর্খাইভের কোথাও পড়ে রয়েছে কিনা, কে জানে? তবে রোমাঞ্চে ভরা সেই দিনগুলোর স্মৃতি বর্ণনার মাধ্যমে চির জাগ্রত হয়ে রয়েছে বৈকি! যেমন : তারা উপগ্রহের সঙ্কেতের সম্প্রচার গ্রহণ এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্য (ঘণ্টাপ্রতি প্রায় চার মিনিটকাল) সঙ্কেতহীন অবস্থা, প্রতি ঘণ্টায় ৪৫ মিনিট অতিক্রমের পরে উপগ্রহের সঙ্কেতহীনতা ইত্যাদি হরেক তথ্যাদি সরবরাহ করে সঙ্কেতের ‘ডপলার শিফট’ এবং উপগ্রহের কক্ষপথের চরিত্র নির্ধারক বৈশিষ্ট্য তথা প্যারামিটারের হিসাব-নিকেশে সাহায্য করে। (ডপলার শিফট মানে চলমান বস্তুর তরঙ্গীয় কম্পনের পরির্বতন। পর্যবেক্ষকের দিকে আগত চলমান বস্তুর কম্পন বেশি হতে থাকে, পর্যবেক্ষক থেকে যত দূরে সরে যেতে থাকে তার কম্পনও ক্রমশ তত কমে যেতে থাকে। এ্যাম্বুলেন্স গাড়ির সাইরেন বা গাড়ির হর্ন ইত্যাদি ডপলার শিফটের উদাহরণ। ১৮৪২ সালে ক্রিস্টিয়ান ডপলার প্রাগে তাঁর ডপলার শিফটের প্রস্তাব করেছিলেন)। একইভাবে বায়ুম-লীয় ইলেক্ট্রনের হ্রাস বৃদ্ধি বা আয়নকৃত অবস্থার ওপরে গবেষণা সম্ভব হয় অপেশাদার রেডিও অপারেটরদের সক্রিয় অংশগ্রহণের কারণেই। আবার এমন ঘটনাও রয়েছে যে স্পুৎনিকের সঙ্কেত বিশ্লেষণে নিয়োজিত গবেষণাগার যে আদি অকৃত্রিম টেকনিক ব্যবহার করেছিল, পরবর্তীকালে সেটিরই সংস্কার করে তৈরি করে উপগ্রহের নেভিগেশনের ধারণা। সোভিয়েতদের স্পুৎনিক সাফল্য যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণভাবে ভীতি ও অনিশ্চয়তার সঞ্চার করে। সূচনা হয় স্পুৎনিক ক্রাইসিস বা সঙ্কটের। সোভিয়েতরা যদিও বেশ কিছুকাল স্পুৎনিক সাফল্যকে সম্প্রচারের অবলম্বন করা থেকে বিরত থাকে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যে, প্রযুক্তিগতভাবে দুই পরাশক্তির মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি হয়েছে। ফলে স্পুৎনিক সাফল্য, ঠা-াযুদ্ধের নতুন ইন্ধনে পরিণত হয় এবং অতি দ্রুত জাতীয় বিমান চালনা ও মহাশূন্য সংস্থা ‘নাসা’ প্রতিষ্ঠিত হয় (১৯৫৮ সালে)। প্রেসিডেন্ট ডুয়াইট ডেভিড আইজেনহাওয়ার স্বয়ং ‘স্পেস রেইস’ বা মহাশূন্য প্রতিযোগিতা নামক নতুন পরিভাষা সৃষ্টি করেন। অতঃপর পরবর্তী কয়েক দশক ধরে দুই পরাশক্তির ভা-ারে মহাশূনের সাফল্য ও অসাফল্য জমা হতে থাকে। ছিল তো দ্বৈতপ্রতিযোগিতা। অবশেষে নতুন শতাব্দীতে মহাশূন্য অভিযান, সত্যিকারভাবেই একচেটিয়াত্বের দোষমুক্তি হয়। স্পুৎনিক-১-এর মডেল জাতিসংঘের প্রবেশ ঘরটিকে সজ্জিত করে রেখেছে। বিখ্যাত স্মিথসোনিয়ানের নাসা অংশেও স্পুৎনিকের মডেল দেখা যায়। বা লন্ডনের বিজ্ঞান মিউজিয়ামসহ পৃথিবীর জানা-অজানা অনেক বিজ্ঞান মিউজিয়ামকে স্পুৎনিকের মডেল ছাড়া ভাবাই যায় না। ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর স্পুৎনিক-১ মহাশূন্য যুগের সূচনা করে। মহাযানের ব্যাটারি শক্তিহীন না হওয়া পর্যন্ত, পরবর্তী আরও ২২ দিন নিয়মিতভাবে স্পুৎনিক-১ ‘বিপ বিপ’ রেডিও সঙ্কেত পাঠিয়ে যায়। আর স্বয়ং স্পুৎনিক-১, আরও তিন মাস ধরে পৃথিবীকে পরিভ্রমণ করে। এই তিন মাসে, প্রায় সত্তর মিলিয়ন কিলোমিটার ভ্রমণে ক্লান্ত স্পুৎনিক-১ কক্ষচ্যুত হয়ে পৃথিবীর বায়ুম-লে প্রবেশের সময় ১৯৫৮ সালের ৪ জানুয়ারি পুড়ে ভস্ম হয়। সূচনা হয় অজানার লক্ষ্যে ও উদ্দেশ্যে সম্পূর্ণ নতুন এক যুগের। স্পুৎনিকের আকর্ষণ ও আবেশ অবিনাশী অমর হয়ে রয়েছে। আসলে আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব এবং স্পুৎনিক-১ বিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানকে স্মরণাতীত করে রেখেছে। হধফরৎধযসধলঁসফধৎ@মসধরষ.পড়স
×