ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কৃমিনাশক, জ্বরের মহৌষধÑ আছে আরও বহুগুণ

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১ নভেম্বর ২০১৪

কৃমিনাশক, জ্বরের মহৌষধÑ আছে আরও বহুগুণ

মোঃ হারেজুজ্জামান হারেজ ॥ আমাদের দেশে কাউকে কিছু জিজ্ঞাসা করার পর তাঁর কাছ থেকে স্বাভাবিক জবাব না পেলে বলে থাকেন, কি ভাই, চিরতার পানি খেয়ে এসেছেন নাকি? চিরতা যে কালোমেঘ, নিম ও নিশিন্দার মতোই তিতা সেটা বোঝানোর জন্যই এ কথা বলা হয়। ঝোপঝাড়, পতিত জমি কিংবা পুকুরপাড়ের জঙ্গলে জন্মানো অনেকটা আগাছা ধরনের এই উদ্ভিদের গুণাবলীও কম নয়। বহুকাল ধরে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার অনেক কাঁচামালের মধ্যে এটিও অন্যতম। বেনেতি বা বড় মুদি দোকানে চিরতার পাতা, ডালপালা এমনকি শুকনো আস্তগাছ কিনতে পাওয়া যায়। চিরতা ভেজানো পানি সব ধরনের জ্বরের মহৌষধ এবং কৃমিনাশক হিসেবেও ব্যাপকভাবে সমাদৃত। চিরতা ছোট ও লতাগুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। উদ্ভিদটি জেনট্রিয়ানাসি পরিবারভুক্ত। এর বৈজ্ঞানিক নাম (ঝবিৎঃরধ ঈযরৎধঃধ) সুয়েরটিয়া চিরাতা। এটির কা- ও শাখা-প্রশাখা গোলাকার। পাতা লম্বা ধরনের, নিচের দিকের পাতা বড় হয়। চারা অবস্থায় দেখতে অনেকটা কালোমেঘ উদ্ভিদের মতো। চিরতার ফুল সবুজ ও পীতবর্ণের হয়ে থাকে। উদ্ভিদটিতে সাধারণত আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে ফুল ফোটে। এর পর ফল হয়। বাংলাদেশে চিরতার অন্তত চারটি প্রজাতি রয়েছে বলে জানান সান্তাহার শহরের পাশের তিলকপুরে অবস্থিত নূরনগর ইউনাইটেড ডিগ্রী কলেজের উপাধ্যক্ষ, উদ্ভিদ বিভাগের শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, চিরতা নামে উদ্ভিদটির সমগ্র গাছই ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষ, কবিরাজ ও শরবতের দোকানিরা। এটি শহর-বন্দরের মুদি দোকান এবং ফুটপাথেও বিক্রি করতে দেখা যায়। তবে এক্ষেত্রে বিক্রেতা ক্রেতার সঙ্গে প্রতারণা করেন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। তারা কালোমেঘ গাছকে চিরতা বলে হরহামেশায় বিক্রি করেন। কারণ অনেকে চিরতার উপকারিতার বিষয় জানলেও গাছটি চেনেন না। কবিরাজ এবং শরবত ব্যবসায়ীরা গুল্মজাতীয় এ উদ্ভিদকে পাকস্থলী বা খাদ্যের পরিপাকতন্ত্রের শোধক ও শক্তিবর্ধক হিসেবে ব্যাপক সমাদর করেন। চিরতা ভেজানো পানি হাঁপানি রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও চিরতা ভেজানো পানি বিভিন্ন প্রকার কৃমি, বদহজম ও যকৃতের বিভিন্ন প্রকার সমস্যা দূর করে। মেহ-প্রমেহ রোগে দারুণ উপকারী চিরতা। পাশাপাশি এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর এবং পিত্তরস নিঃসরণ করে। চিরতার শুকনো পাতা ও শাখা-প্রশাখা গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে একদিন পর সেই পানি ছেঁকে নিয়ে ৪/৫ দিন মাথা ধুলে মাথার চুল পড়া বন্ধ হয়ে যায়। চিরতা ঢাকা, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ব্যাপকহারে পাওয়া যায়। অন্য এলাকায়ও কম-বেশি দেখা মেলে বহুল উপকারী এ গাছটির। উদ্ভিদটি চারা অবস্থায় দেখতে এক রকম, আবার পরিণত অবস্থায় দেখতে আরেক রকম। এ উদ্ভিদটি এখনও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষাবাদ না হলেও সম্প্রতি অনেকে শখ করে চাষ করছেন। এমন এক সৌখিন চাষীর সন্ধান মেলে বগুড়ার সান্তাহার শহরে। ব্যবসায়ী আনজুমান ইসলাম জেহাদ ভারত থেকে বীজ এনে প্রথমে বাড়ির ফুলের টবে লাগান। টবে হওয়া চিরতা গাছের ফল থেকে সংগ্রহ করা বীজ তিনি বপন করেন তার পুকুরপাড়ে। সেখানেও বহু চিরতা গাছ জন্ম নেয়। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করা হলে এবং চিরতার সঠিক পরিচয় ও গুণাগুণ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারলে অন্য ঔষধি গাছকে চিরতা হিসেবে চালিয়ে দেয়ার মতো প্রতারণা রোধ করা সম্ভব হবে বলে অভিজ্ঞ মহলের অভিমত।
×