ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিজামীর ফাঁসি

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৩০ অক্টোবর ২০১৪

নিজামীর ফাঁসি

তার পরেও এই ঘাতক মানবতাবিরোধী অপরাধীকে মন্ত্রীর মর্যাদায় বসিয়ে জাতীয় পতাকাকে চরম অবমাননা করা হয়েছিল একসময়ে বুধবার একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির রায় হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর প্রধান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম নিজামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসাইন ও বিচারপতি মোঃ আনোয়ারুল হকও রায় ঘোষণার সময়ে উপস্থিত ছিলেন। রায়ে বলা হয়েছেÑ হত্যা, লুট, ধর্ষণ, উস্কানি ও সহায়তা, পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার ১৬টির মধ্যে চারটিতেই নিজামীকে সর্বোচ্চ সাজা দেয়া হয়েছে। এই রায়ের মাধ্যমে জাতি কলঙ্কমুক্তির দিকে এগিয়ে গেল। শুধু তাই নয়, এই রায়ে দেশের আপামর মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে। একটি স্বাধীন দেশে এ ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের এতদিন বিচার না হওয়াটাই ছিল দুঃখজনক। দেরিতে হলেও তাদের বিচার করা সম্ভব হয়েছে এটাই বর্তমান সরকারের একটি বড় সার্থকতা। অভিযুক্ত নিজামী মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিলেন জামায়াতেরই ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের প্রধান এবং সেই সূত্রে পাকিস্তান বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য গঠিত আলবদর বাহিনীরও নেতা। স্বাধীনতাকামী বাঙালীকে দমন ও নিপীড়ন করতে সেই সময় যে রাজাকার বাহিনী ও শান্তি কমিটি গঠিত হয়েছিল সেখানেও এই ঘাতক নিজামী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। রাজাকার ও আলবদর বাহিনী পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে সহযোগিতা করে নিপীড়ন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, সংখ্যালঘুদের নির্যাতন ও হত্যার মতো অমানবিক ঘটনার সৃষ্টি করে। স্বাধীনতার দুই দিন আগে দেশকে মেধাশূন্য করতে বুদ্ধিজীবীদের হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই ঘাতক নিজামী। বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রস্তুত থেকে শুরু করে তাঁদের হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দিয়ে যে বর্বর হিংস্রতার পরিচয় দেয়া হয়ছিল তার প্রধান রূপকার ছিলেন আজকের এই নিজামী। তার এসব অপরাধ সবর্জনবিদিত। তারপরেও এই ঘাতক মানবতাবিরোধী অপরাধীকে মন্ত্রীর মর্যাদায় বসিয়ে জাতীয় পতাকাকে চরম অবমাননা করা হয়েছিল এক সময়ে। মন্ত্রী থাকাকালে জঙ্গীবাদকে চরমভাবে প্রশ্রয় দেয় সেই সরকার। মন্ত্রী থাকাকালে চাঞ্চল্যকর ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলাতেও তার ফাঁসি হয়। গত চারদলীয় জোটের সরকারের শিল্পমন্ত্রী ছিলেন মতিউর রহমান নিজামী। তার আগে একই সরকারের কৃষিমন্ত্রী ছিলেন এই ঘাতক। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের ক্ষেত্রে অন্যতম সহযোগী ছিলেন মতিউর রহমান নিজামী। তিনি গ্রেফতার হন ২৯ জুন ২০১০-এ। অভিযোগ গঠন করা হয় ২৮ মে-২০১১, সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় ২০১২ সালের ২৬ আগস্ট, দ্বিতীয় দফায় যুক্তি উপস্থাপন করা হয় ২০১৪ সালের ১০ মার্চ, বিচার শেষ হয় ২০১৪ সালের ২৪ মার্চ এবং রায় ঘোষণা হয় ২৯ অক্টোবর ২০১৪ তে। ঘাতক নিজামীর সাজা ঘোষণার পর ট্রাইব্যুনালের বাইরে অপেক্ষমাণ মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা, শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বানে উপস্থিত জনতা উল্লাস প্রকাশ করে। আরও উল্লাস প্রকাশ করেছে আসামির জেলা পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের সাধারণ মানুষ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যে কখনও হারিয়ে যাবে না এবং অপরাধীদের বিচার হবে এই রায়ের মাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর মহান সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা আর জাতীয়তাবাদের চেতনা থেকে ছিটকে এসে ধর্মীয় রাজনীতির নামে দেশকে অনেকাংশে পিছিয়ে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা সফল হতে পারেনি। স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রায় ৪৩ বছর পরও এই মানবতাবিরোধী অপরাধীকে সর্বোচ্চ শাস্তি পেতে হলো। দেশের গণতন্ত্রকামী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ মানুষ চায় ফাঁসির রায়টি দ্রুত কার্যকর করা হোক। জাতি হোক কলঙ্কমুক্ত।
×