ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বটতলা নাট্যোৎসবে মঞ্চস্থ হলো না-মানুষী জমিন

প্রকাশিত: ০৪:৫৫, ২৯ অক্টোবর ২০১৪

বটতলা নাট্যোৎসবে মঞ্চস্থ হলো না-মানুষী জমিন

সংস্কৃতি সংবাদ স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিকেলে থাকছে পথনাটক, মূকাভিনয়, পাপেট শো কিংবা সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। আর সন্ধ্যা হলেই নাট্যানুরাগীদের মন মাতিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে নাটকের প্রদর্শনী। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার বহিরাঙ্গন ও মিলনায়তনে গত কয়েকদিন ধরে এমন দৃশ্যের দেখা মিলছে। এখানে চলছে নাট্যদল বটতলা আয়োজিত নাট্যোৎসব। আট দিনব্যাপী এ উৎসবের শিরোনাম ছড়াই স্বপ্নবীজ আকাশ তলে : বটতলা রঙ্গমেলা ২০১৪। মঙ্গলবার ছিল উৎসবের পঞ্চম দিন। এদিন বিকেলে পথনাটকের পরিবেশনা শেষে সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হয় থিয়েটার আর্ট ইউনিটের নাটক না-মানুষী জমিন। নাট্য প্রদর্শনী শেষে প্রযোজনাটির অভিনয় শিল্পীদের উত্তরীয় ও নির্দেশককে স্মারক সম্মাননা তুলে দেন অভিনেত্রী ও নির্দেশক নায়লা আজাদ নুপুর। আনিসুল হকের উপন্যাস অবলম্বনে প্রযোজনাটির নাট্যরূপ ও নির্দেশনা দিয়েছেন সাইফ সুমন। নাটকের গল্পে একদল নারী-পুরুষ আর শিশুকে ধরে আনা হয় সীমান্ত অঞ্চলে। তাদের ঠেলে দেয়া হবে ওই পারে। সুযোগ বুঝে গভীর রাতে সীমান্তরক্ষীরা তাদের ঠেলে দেয় নো ম্যানসল্যান্ড বা না মানুষী জমিনে। কিন্তু ওপারের সীমান্তরক্ষীরাও প্রস্তুত। কাউকে তারা তাদের পারে ঢুকতে দিল না, রুখে দাঁড়াল সঙ্গীন উঁচিয়ে। প্রচ- শীত আর কুয়াশার মধ্যে খোলা আকাশের নিচে আটকা পড়ে রইল একদল মানব সন্তান। তাদের মধ্যে একজন নারী গর্ভবতী, কুয়াশার চাদরের নিচে সন্তান প্রসব করে মারা গেল সে। নো ম্যানসল্যান্ডেই পড়ে রইল সেই মানবশিশু। কী তার দেশ? কী তার পরিচয়? এখন কী হবে ওই শিশুটির? এপার বা ওপার কেউই তার দায়িত্ব নেয় না। দুই দেশের সাধারণ মানুষ সীমান্ত ব্যারিকেডের ওপার থেকে মৃত মায়ের সঙ্গে পড়ে থাকা বাচ্চাটির কান্না শুনতে পেলেও কাছে যেতে সাহস করে না সীমান্তরক্ষীদের গুলির ভয়ে। তবে কি মানবিকতার উর্ধে রাষ্ট্র কিংবা রাজনীতি? এমন প্রশ্নের মুখোমুখি দর্শকদের দাঁড় করিয়ে দেয় নাটক না মানুষি জমিন। প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রশান্ত হালদার, সুজন রেজাউল, হাসনাত প্রদীপ, রিয়াজ হোসেন, কামাল রায়হান, সৈয়দ অলক, তানিয়া চৌধুরী শিল্পী, শাহনাজ শানু, সুমন মজুমদার, পিয়ার মোহাম্মদ, মোকাদ্দেম মোরশেদ, মাহফুজ সুমন, নূরুজ্জামান বাবু, জায়েদ হোসেন, আকিব বাবু, রুবেল অরভিল, আসিফ মামুন, এস আর সম্পদ, সজীব আহমেদ, সজল চৌধুরী, প্রপা হালদার ও আদিব মাহমুদ। শাহীনুর রহমানের মঞ্চ পরিকল্পনায় আলোক পরিকল্পনা করেছেন ঠান্ডু রায়হান। পোশাক পরিকল্পনায় ছিলেন রোকেয়া রফিক বেবী। সঙ্গীত পরিকল্পনা করছেন সেলিম মাহবুব এবং কোরিওগ্রাফি করছেন মোকাম্মেল হোসেন রিপন। বিকেলে নাট্যশালার বহিরাঙ্গনে বটতলা পরিবেশন করে পথনাটক জতুগৃহ। সামিনা লুৎফা নিত্রার রচনায় নির্দেশনা দিয়েছেন মোহাম্মদ আলী হায়দার। আজ বুধবার উৎসবের ষষ্ঠ দিন। এদিন সন্ধ্যায় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হবে নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের প্রযোজনা নাম-গোত্রহীন মান্টোর মেয়েরা। নাট্যরূপ ও নির্দেশনা দিয়েছেন ঊষা গাঙ্গুলী। ঢাবিতে কবিতাপাঠের আসর আন্তর্জাতিক মুশায়েরা ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বিশ্ব মানবতাকে ঐক্যবদ্ধ করতে বিভিন্ন ভাষায় সাহিত্য চর্চার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, ভাষা ও সাহিত্য চর্চার মাধ্যমে সকল জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও গোষ্ঠীকে একত্রিত করা সম্ভব। মঙ্গলবার আরসি মজুমদার আর্টস মিলনায়তনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উর্দু বিভাগ আয়োজিত কবিতা পাঠের আসর ‘আন্তর্জাতিক মুশায়েরা’ উদ্বোধনকালে তিনি এই আহ্বান জানান। উর্দু বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ গোলাম রব্বানীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কবি কাজী রোজী। এছাড়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাহিত্য ও সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্রের সভাপতি স্থপতি ড. শরিফ আলী চৌধুরী, উর্দু বিভাগের অধ্যাপক ড. জীনাত আরা সিরাজী, জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কবি আসলাম সানী, সাহিত্য ও সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্রের মহাসচিব মুহাম্মদ ইনায়াতুল্লাহ সিদ্দিকী প্রমুখ। উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, কোন ভাষার সঙ্গে আমাদের বিরোধ নেই। বিশ্বের সকল ভাষার অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে। উর্দুকে একটি প্রাচীন ভাষা এবং এই ভাষার সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে মানব সভ্যতার সম্পদ হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, এই সম্পদকে কাজে লাগিয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং মানবিকতাবোধ জাগ্রত করার ক্ষেত্রে ‘আন্তর্জাতিক মুশায়েরা’ সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি আশাপ্রকাশ করেন। দিনব্যাপী এই আন্তর্জাতিক মুশায়েরায় বাংলাদেশ, ভারত ও ফিলিস্তিনের অর্ধ-শতাধিক কবি বিভিন্ন ভাষায় কবিতা আবৃত্তি করেন। আজ সন্ধ্যায় পাপেট প্রদর্শনী বেদকন্যা ॥ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের উদ্যোগে প্রতি মাসে দুইদিন পুতুল নাট্য আয়োজনের ধারাবাহিকতায় একাডেমির পাপেট থিয়েটার দলের পরিবেশনায় আজ বুধ ও কাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে বেঁদে সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রাকে উপজীব্য করে ‘বেদকন্যা’ শীর্ষক পরিবেশনার আয়োজন করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, আগামী ১ নবেম্বর থেকে ১০ নবেম্বর থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অনুষ্ঠিতব্য ওয়ার্ল্ড পাপেট কার্নিভ্যালে পরিবেশিত হবে এই বেদকন্যা শীর্ষক এই পাপেট প্রদর্শনী। কার্নিভ্যালে বাংলাদেশসহ মোট ৮০টি দেশের ১৪০টি দল অংশগ্রহণ করবে। গত বছর এ কার্নিভ্যালে অংশগ্রহণকারী সব দেশকে হারিয়ে বাংলাদেশের পুতুল নাট্য দল বিশ্ব সেরা খেতাব অর্জন করে।
×