ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে অভিসার থেকে ঘরে ফেরা হলো না রীপার

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ২৯ অক্টোবর ২০১৪

পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে অভিসার থেকে ঘরে ফেরা হলো না রীপার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পরকীয়ার সূত্র ধরেই বান্দরবানে ঘুরতে যাওয়া। প্রেমিকের সঙ্গে একান্ত নিরিবিলি সময় কাটানো। আনন্দ-স্ফূর্তির পর বাড়ি ফিরছিলেন। কিন্তু বিধি বাম! আর বাড়ি ফেরা হলো না। বান্দরবান থেকে রাজধানীর কলাবাগান নেমে রিক্সায় বাসায় ফিরছিলেন। ঠিক এ সময় ছিনতাইকারীরা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে টান মারে। ভ্যানিটি ব্যাগ হাতে আটকে গেলে রাস্তায় পড়ে যান আয়েশা আক্তার রীপা। মাথায় প্রচ- আঘাত পান। শেষ পর্যন্ত চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় রীপার। মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে রাজধানীর ধানম-ি মডেল থানাধীন সোবহানবাগ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনের রাস্তায় ঘটনাটি ঘটে। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আয়েশা আক্তার রীপার (২৮) পিতার নাম মোহাম্মদ শাহজাদা। রীপারা ৪ বোন এক ভাই। রীপার স্বামীর নাম আওলাদ হোসেন শিমুল। পেশায় জমি ব্যবসায়ী। তবে প্রচ- মাদকাসক্ত। বসবাস করছিলেন রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন লালমাটিয়া এ ব্লকের পানির ট্যাংকের পেছনের ৫/৬ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলায়। সংসারে একমাত্র মেয়ে রাইশা (৬)। সে মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়া এলাকার চিলড্রেন গার্ডেন নামের একটি বেসরকারী কিন্ডারগার্টেন স্কুলের কেজি ওয়ানের শিক্ষার্থী। স্বামী মাদকাসক্ত হওয়ার কারণে মেয়েকে প্রায় সময়ই স্কুলে আনা-নেয়ার কাজটি করতে হতো রীপাকে। প্রায় ২ বছর আগের কথা। এই স্কুলে যাতায়াতের সুবাদে পরিচয় হয় খান মোহাম্মদ ইব্রাহীম (৩৭) নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। ইব্রাহীম দুই সন্তানের জনক। তার এক সন্তানকে তার স্ত্রীকে মোহাম্মদপুরের একটি স্কুলে আনা নেয়ার কাজ করতে হয়। আর অপর সন্তানটি রাইশাদের স্কুলের শিক্ষার্থী। যে কারণে ইব্রাহীমকে এই সন্তানকে স্কুলে আনা-নেয়ার কাজ করতে হয়। স্কুলে যাতায়াতের সুবাদেই পরিচয় হয় রাইশার মা রীপার সঙ্গে। পরিচয়ের সুবাদে দু’জনের ব্যক্তিগত সম্পর্ক গভীর হয়। গভীর সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত পরকীয়ায় গড়ায়। পরকীয়ার সুবাদে তারা ঢাকাতেই বহুবার মিলিত হয়েছে। তাতে মনের বাসনা পুরোপুরি মিটছিল না। তাই দু’জনে একান্ত নিরিবিলি সময় কাটাতে গত ২৪ অক্টোবর বান্দরবান চলে যায়। মঙ্গলবার ভোরে তারা বান্দরবান থেকে ঢাকায় ফেরেন। ভোর সোয়া ৬টার দিকে কলাবাগান মোড়ে নামেন। তারা একটি রিক্সা নিয়ে লালমাটিয়ার বাসায় যাচ্ছিলেন। রিক্সাটি সোবহানবাগ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে পৌঁছে। রীপা রিক্সার বামদিকে বসা ছিলেন। এ সময় মসজিদের বাম দিকের রাস্তা থেকে একটি দ্রুতগতির মাইক্রোবাস বের হয়। মাইক্রোবাসটি রিক্সার কাছে পৌঁছে। রীপা আর ইব্রাহীম গল্প করছিলেন। কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাইক্রোবাস থেকে ছিনতাইকারীরা রীপার বাম হাতে ঝুলানো ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে টান মারে। আর তাতেই রীপা রিক্সা থেকে ছিটকে রাস্তায় পড়ে যান। গুরুতর আহত রীপাকে ধানম-ি বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রীপার মৃত্যু হয়। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায়। রীপার মৃত্যুর বিষয়ে তার ভাই রায়হানজাদা রবির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, রীপার মৃত্যুর খবর শুনে তার বড় ভগ্নিপতি মোহাম্মদপুর যাওয়ার পথে সদরঘাটে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। তাই তিনি কোন কথা বলতে পারছেন না। রীপাকে মোহাম্মদপুরে দাফন করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে ধানম-ি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হেলাল উদ্দিন জনকণ্ঠকে জানান, রীপার মৃত্যুর ঘটনায় নিহতের পরিবারের তরফ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। রীপার পরিবার মামলা দায়ের না করলে পুলিশের তরফ থেকে মামলা দায়ের করা হবে। তার প্রস্তুতি চলছে। ছিনতাইকারীদের গ্রেফতারের পাশাপাশি ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি শনাক্ত করার কাজ চলছে।
×