ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশে নাশকতার ছক কষা হয় পশ্চিমবঙ্গে

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ২৯ অক্টোবর ২০১৪

বাংলাদেশে নাশকতার ছক কষা হয় পশ্চিমবঙ্গে

জেএমবির ৬৫ মডিউল সক্রিয় ॥ সরবরাহ করে জঙ্গী ও বিস্ফোরক বিশেষ প্রতিনিধি ॥ কুয়েতের একটি এবং সৌদি আরবের দু’টি এনজিও থেকে জিহাদী টাকায় বাংলাদেশ থেকে অসম হয়ে পশ্চিমবঙ্গে জেএমবির শক্তিশালী জঙ্গী নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, বাংলাদেশের একাধিক এলাকায় একযোগে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল জেএমবি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ কয়েক ভিভিআইপি ছিলেন জেএমবি’র প্রধান টার্গেট। এজন্য বাড়তি বিস্ফোরকের অর্ডারও এসেছিল বর্ধমানের খাগড়াগড়ের গ্রেনেড কারখানাগুলোতে। বাংলাদেশে গ্রেফতার জামায়াতুল মুজাহিদীন সদস্যদের স্বীকারোক্তি থেকে জানা গেছে, গত কয়েকমাসে ভারত ও বাংলাদেশ থেকে কয়েক শ’ প্রশিক্ষিত জঙ্গী সিরিয়ায় আলকায়েদা অনুসারী জঙ্গী দল আইসিসের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে বোমা বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত জঙ্গীদের গোয়েন্দা রিপোর্টে ইতোমধ্যেই এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার কাছে বিভিন্ন সূত্র থেকে বিশাল এক জঙ্গী নেটওয়ার্কের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে বলে সূত্রে প্রকাশ। পশ্চিমবঙ্গে সক্রিয় পঁয়ষট্টি জঙ্গী মডিউল। জামায়াতুল মুজাহিদীনের রাজ্যেই লুকিয়ে রয়েছে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্ব। এখানেই কষা হয় বাংলাদেশে নাশকতার ছক। এখান থেকেই বাংলাদেশে আসে জঙ্গী ও বিস্ফোরক। জামায়াতের হাত ধরে এ রাজ্য থেকেই আইসিস জঙ্গীগোষ্ঠীতে যায় তরুণ-তরুণীরা। এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য রয়েছে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার রিপোর্টে। মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্টে আইসিসকে বিশ্বের ধনীতম জঙ্গীগোষ্ঠী বলা হয়েছে। অভিন্ন ইসলামী রাষ্ট্রগঠনের দাবিতে আইসিসের আহ্বানে ইউরোপের কয়েক হাজার তরুণ-তরুণী সাড়া দিয়ে আবার অনুশোচনা করে দেশে ফিরে যাবার আকাক্সক্ষাও প্রকাশ করেছে। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার হাতে আসা গোয়েন্দা তথ্যমতে বাংলাদেশ আর ভারত থেকেও প্রশিক্ষিত জঙ্গীরা যোগ দিয়েছে আইসিসে। ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তুরাগ এলাকা থেকে গ্রেফতার হয় ৭ জামায়াতুল মুজাহিদীন সদস্য। এই ৭ জনের মধ্যে জেএমবির কার্যনির্বাহী প্রধান আবদুল্লাহ আল তাসনিম ওরফে নাহিদকে জেরা করে জানা গেছে ভারতে জেএমবি মডিউলের চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গেছে, ২০১০ সাল থেকে ভারতের মাটিকে কাজে লাগিয়ে ফের সংগঠিত হতে শুরু করেছে জামায়াতুল মুজাহিদীন। ২০১০ সালে ১০ সক্রিয় জেএমবি এবং জামায়াত সদস্যকে দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে তৈরি হয়েছিল দু’টি জামায়াত মডিউল। মডিউল তৈরিতে প্যত্যক্ষ ভূমিকা নেয় জেএমবি’র সর্বোচ্চ কমিটি শূরা সদস্য আনিসুর ও মোফাজ্জল হুসেন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় এগারো শ’ জেএমবি কর্মী -সমর্থক সীমান্ত পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকেছে। ২০১০ থেকে ২০১৪ বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে একসঙ্গে তৎপর জেএমবির ২টি মডিউলের সংখ্যা চার বছরে বেড়ে ৬৫টি হয়েছে। এত মডিউল চালানোর টাকার উৎস সন্ধান করে গোয়েন্দারা জেনেছেন, পশ্চিম এশিয়া থেকে অবৈধ আর্থিক লেনদেন ‘হাওয়ালা’ মারফত বাংলাদেশ হয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকেছে বিপুল জিহাদী অর্থ। এই হাওয়ালা চক্রে যুক্ত কুয়েতের একটি এবং সৌদি আরবের দু’টি এনজিও। মডিউলগুলোর মূল কাজ বাংলাদেশে নাশকতা চালাতে বিস্ফোরক ও প্রশিক্ষিত জঙ্গীর সরবরাহ দেয়া। শুধু তাই নয়, গোয়েন্দা তথ্য বলছে, বাংলাদেশে জেএমবি’র জঙ্গীগোষ্ঠীও নিয়ন্ত্রিত হয় ভারত থেকেই। জামায়াতুল মুজাহিদীনের ফ্যতিষ্ঠাতাসদস্য সোহেল মেহফুজ ভারতে বসেই বাংলাদেশের সংগঠন নিয়ন্ত্রণ করে। এ বছরের গোড়ায় বাংলাদেশ থেকে এসে সোহেলের সঙ্গে যোগ দেয় জাহেদুল ইসলাম ও সালাউদ্দিন। ময়মনসিংহের ত্রিশালে পুলিশ হত্যা করে প্রিজনভ্যান থেকে জেএমবি জঙ্গী জাহিদুল ইসলামকে সিনেম্যাটিক কায়দায় ছাড়িয়ে নিয়ে এসেছিল ফেরার জেএমবি জঙ্গী ফারুক। ফারুকসহ অপহৃত চার জঙ্গীর থাকার ব্যবস্থা করেছিল পশ্চিমবঙ্গের বসিরহাটের এক মৌলভী । এনআইএ’র তদন্তে জানা গেছে, বর্ধমানের শিমুলিয়ার ৭৬টি অনুমোদনহীন মাদ্রাসা থেকে ইতোমধ্যে জঙ্গী প্রশিক্ষণ নিয়েছে প্রায় এক শ’ কিশোরী। এই প্রশিক্ষিত জঙ্গীদের ঘিরেই এখন ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তাদের উদ্বেগ বাড়ছে। রাজ্যের অন্যান্য প্রশিক্ষণ শিবিরের প্রশিক্ষিত জঙ্গীসংখ্যা হিসেব করলে সংখ্যাটি বেশ কয়েক শ’ ছাড়িয়ে যায় বলেই মনে করছেন ভারতের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। বাংলাদেশের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, গত কয়েক মাসে ভারত এবং বাংলাদেশ দুই দেশ থেকে কয়েক শ’ প্রশিক্ষিত জঙ্গী আইসিসে যোগ দিয়েছে। গত সেপ্টেম্বরেই বাংলাদেশের পররাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ নিয়ে সতর্ক করা হয়েছিল দিল্লীকে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার তদন্তে আপত্তি করেছিলেন। এখন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দলের কর্মকর্তাদের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ব্যবহার করে জঙ্গীবাদের ভয়ঙ্কর বিস্তৃতির তথ্য বেরিয়ে আসাতে সোমবার ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড (এনএসজি)’র মহাপরিচালক শরদ কুমার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে প্রশিক্ষিত জঙ্গীদের তৎপরতার ব্যাপারে আশঙ্কার কথাই আবার শুনিয়ে গেলেন বলে সংবাদ প্রকাশ করেছে ভারতের গণমাধ্যম।
×