ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বোলিংয়ে জিম্বাবুইয়ের পাল্টা জবাব

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ২৭ অক্টোবর ২০১৪

বোলিংয়ে জিম্বাবুইয়ের পাল্টা জবাব

মিথুন আশরাফ ॥ বাংলাদেশ-জিম্বাবুইয়ে মিরপুর টেস্টে প্রথম দিনটি স্পিন ভেল্কিতে বাংলাদেশ নিজেদের করে নিয়েছে তো দ্বিতীয় দিনটি পেস গতিতে করে নিয়েছে জিম্বাবুইয়ে। পাল্টা জবাব পেয়েছে বাংলাদেশ। প্রথমদিন বাংলাদেশ অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ৬ উইকেট নিয়ে জিম্বাবুয়েকে ২৪০ রানে আটকে দিয়েছে। দ্বিতীয় দিন পেসার টিনাসে পানইয়াঙ্গারা ৫ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে গুটিয়ে দিয়েছেন ২৫৪ রানেই। দিন শেষ হওয়ার আগে দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে জিম্বাবুইয়ে ৫ রান করায় এখনও বাংলাদেশ ৯ রানে এগিয়ে রয়েছে। তবে ম্যাচটিতে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের অহেতুক আউট হওয়া সবার দৃষ্টিকটু লেগেছে। টেস্টের মতো খেলায় ৩ ব্যাটসম্যান (মুমিনুল, সাকিব, শাহাদাত) রান আউট হওয়া, সঙ্গে ৩ ব্যাটসম্যানের (শামসুর, মুশফিক, শুভগত) উইকেট ছুড়ে দিয়ে আশা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না। সাকিব আল হাসান ব্যাট হাতে নামতেই পুরো স্টেডিয়াম যেন ‘সাকিব, সাকিব’ চিৎকারে কেঁপে উঠল। স্টেডিয়ামে আগত প্রত্যেক দর্শক বোলিংয়ে তার দুর্দান্ত নৈপুণ্যের পর ব্যাটিংয়েও বিশেষ কিছুই আশা করেন। কিন্তু এবার হতাশ করলেন সাকিব। ৬ উইকেট নিয়ে জিম্বাবুইয়ের প্রথম ইনিংস ধসে দেয়ার পর নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে ৫ রান করে রান আউট হয়ে যান। সাকিব হতাশ করলেও প্রয়োজনের মুহূর্তে মুশফিকুর রহীম (৬৪), মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (৬৩), মুমিনুল হক (৫৩) হতাশ করেননি। কিন্তু তাদের অহেতুক আউট হওয়া কারোরই নজর কারেনি। জিম্বাবুইয়ে প্রথম ইনিংসে করে ২৪০ রান। জবাবে প্রথম দিন শেষ হওয়ার আগে ১ উইকেটে ২৭ রান করেছিল বাংলাদেশ। পিছিয়ে ছিল ২১৩ রানে। মুমিনুল ১৪ ও শামসুর রহমান শুভ ৮ রানে ব্যাট করছিলেন। দ্বিতীয় দিন এই দুইজন ব্যাট হাতে দলকে এগিয়ে নিতে নামেন। কিন্তু স্কোরবোর্ডে আর ২ রান যোগ হতেই শামসুর আউট হয়ে যান। আর কোন রান যোগ করতে পারেননি শামসুর। বাংলাদেশ শুরুতেই ধাক্কা খায়। সেই ধাক্কা তৃতীয় উইকেটেই সামলে নেয় বাংলাদেশ। মুমিনুল ও মাহমুদুল্লাহ মিলে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। দুইজন মিলে ৬৩ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন। দলের স্কোরও ৯২ রানে গিয়ে দাঁড়ায়। এমন সময় অহেতুক রান আউটের শিকার হন মুমিনুল। অসাধারণ খেলতে থাকা এ ব্যাটসম্যানের ব্যাট পপিং ক্রিজ ছুঁতে পারেনি। অল্পের জন্য রান আউট হয়ে যান মুমিনুল। এতটা দুর্বল হয়ে ব্যাট পপিং ক্রিজে রাখতে যাবেন মুমিনুল, অন্তত তাঁর কাছ থেকে কেউ আশা করেনি। সাজঘরে ফেরার আগে ১১২ বলে ৫ চারে ৫৩ রান করেন। এরপরই ব্যাট হাতে নামেন সাকিব। আশা করা হচ্ছিল, আগের দিন যে সাকিব বলেছেন ভাল ফল পেতে হলে ৩৫০Ñ৪০০ রান করতে হবে, সাকিব বড় একটি ইনিংস খেলে দেবেন। কিন্তু পারলেন না। তিনিও রান আউটের শিকার হয়ে গেলেন। দলীয় ১১৪ রানে ৫ রান করে রান আউট হয়ে যান সাকিব। বাংলাদেশ হারায় ৪ উইকেট। দল বিপাকেও পড়ে যায়। তবে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ঠিকই উইকেট আঁকড়ে থাকেন। সাকিব আউটের পর মাহমুদুল্লাহর সঙ্গে যোগ দেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। মাহমুদুল্লাহ অর্ধশতক পূরণ করেন। আর মুশফিক তাঁকে সঙ্গ দিতে থাকেন। দলীয় ১৭৮ রানে গিয়ে মাহমুদুল্লাহও আউট হয়ে যান। দুইজন মিলে ৬৪ রানের জুটি গড়েন। হঠাৎ করেই এসে পড়ে বিপত্তি। ১৬০ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৬৩ রান করে এলবিডাবলিউ হয়ে সাজঘরে ফেরেন মাহমুদুল্লাহ। সিকান্দার রাজার বলটি মাহমুদুল্লাহর পায়ে লাগে। আউটের আপীলও হয়। কিন্তু আম্পায়ার সাড়া দেননি। জিম্বাবুইয়ে রিভিউ সিস্টেমের শরণাপন্ন হয়। এর আগে প্রথমদিন বাংলাদেশ ও জিম্বাবুইয়ে একটি করে রিভিউ নিয়ে ফল পেতে ব্যর্থ হয়। দ্বিতীয় দিন জিম্বাবুইয়ে একটি রিভিউ নেয়। সেটাতেও ব্যর্থ হয়। কিন্তু এবার আর ব্যর্থতা তাদের গায়ে লাগেনি। এ রিভিউ ব্যর্থ হলেই নিয়ম অনুযায়ী এক ইনিংসে যে ২ বার রিভিউ নেয়া যায় তা শেষ হয়ে যেত জিম্বাবুইয়ের। কিন্তু এবার সাফল্য আসে। টিভি রিপ্লেতে দেখা যাচ্ছিল ব্যাটের গা ঘেঁষে বল মাহমুদুল্লাহর পায়ে লাগে। কিন্তু আম্পায়ারকে সব নির্ণয় করে ঠিকই আউটের সিদ্ধান্ত দিতে হয় শেষ পর্যন্ত। মাহমুদুল্লাহর আউটের পর মাঠে নামেন শুভগত হোম চৌধুরী। চা বিরতি পর্যন্ত ৫ উইকেটে ১৮৯ রান করে বাংলাদেশ। ৫১ রানে তখনও পিছিয়ে থাকে। এই দুইজন মিলে দুর্দান্ত ব্যাটিং করতে থাকেন। বাউন্ডারি হাঁকিয়ে মুশফিক অর্ধশতক পূরণ করেন। দলের রানও ১৯৯ রান থেকে গিয়ে দাঁড়ায় ২০৩ রানে। ২০৯ রান হতেই শুভগত (১৪) অহেতুক স্ট্রেটে শট খেলতে গিয়ে আউট হয়ে গেলেন। বাংলাদেশের ৬ উইকেটের পতন ঘটে গেল। খুব বেশিদূর যেতে পারেনি বাংলাদেশ। ২২৬ রানে যেতেই আরেকটি মূল্যবান উইকেটের পতন ঘটে যায়। এবার অহেতুক ক্যাচ আউট হয়ে গেলেন মুশফিক (৬৪)। পানইয়াঙ্গারার করা শর্ট বলটি অফ সাইডের বাইরে চলে যাচ্ছিল। অথচ মুশফিক পুল করতে গেলেন। স্কয়াল লেগে দাঁড়ানো এরভিনের হাতে গিয়ে পড়ল বল। ক্যাচ ধরে নিলেন। এক রানও যোগ হয়নি। শাহাদাত হোসেন রাজিবও বোকার মতো রান আউট হয়ে গেলেন। পানইয়াঙ্গারার বলটি শর্ট লেগে ঠেলে দিয়ে পপিং ক্রিজ থেকে এক ধাপ এগিয়ে যান। হেলামি করে স্ট্রাইকে আসতে আসতে এরভিন উইকেটে বল ছুঁড়ে মারেন। পপিং ক্রিজে ব্যাটটিও রাখতে এত দেরি করেন শাহাদাত যে, রান আউটই হয়ে যান। অহেতুক আউটের মিছিল যেন পড়ে যায়। তাইজুল ইসলাম ও জুবায়ের হোসেন লিখন মিলে শেষ পর্যন্ত দলকে লিড এনে দেন। ৯৩ ওভারের শেষ বলে চিগুম্বুরার বলে বাউন্ডারি হাঁকান তাইজুল। বাংলাদেশ ৩ রানে এগিয়ে যায়। তবে এ এগিয়ে যাওয়া খুব বেশিদূর যেতে পারেনি। ৪ রানের লিড হতেই পানইয়াঙ্গারার বলে বোল্ড হয়ে যান তাইজুল (১৯)। বাংলাদেশের ৯ উইকেটের পতন ঘটে যায়। তাইজুলকে আউট করার মধ্য দিয়ে এক ইনিংসে ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করে ফেলেন পানইয়াঙ্গারা। ২০০৫ সালে বাংলাদেশের কাছে যে জিম্বাবুইয়ে সিরিজ হেরেছিল, সেই জিম্বাবুইয়ে দলের সদস্য ছিলেন পানইয়াঙ্গারা। সর্বশেষ উইকেটটিও নিলেন পানইয়াঙ্গারাই। বাংলাদেশ যখন জিম্বাবুইয়ে থেকে ১৪ রানে এগিয়ে গেছে এমন সময় আল আমিনকে (৯) বোল্ড করে দেন এ পেসার। ২৫৪ রানেই বাংলাদেশের ইনিংস গুটিয়ে যায়। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে দ্বিতীয় দিনে মাত্র ২ ওভার খেলার সুযোগ পায় জিম্বাবুইয়ে। ৫ রান করে। ভুসিমুজি সিবান্দা একাই এ ৫ রান করেন। তাঁর সঙ্গে চাকাবভা আছেন ব্যাট হাতে। আজ তৃতীয় দিন এ দুইজন ব্যাট হাতে নামবেন।
×